মণিপুরে দীর্ঘদিন ধরেই কুকি এবং মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকার কুকি সম্প্রদায়ের দুটি জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে এক বছরের জন্য শান্তিচুক্তি বা সংঘর্ষবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই দুই গোষ্ঠী হল ‘ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন’ এবং ‘ইউনাইটেড পিপলস ফ্রন্ট’। চুক্তি স্বাক্ষরের একদিন পরই মণিপুরের তিনটি জেলায় বড়সড় অভিযান চালাল আধাসেনা।
এই অভিযানে ধরা পড়েছে নিষিদ্ধ মেইতেই জঙ্গি সংগঠন ‘প্রিপাক’-এর পাঁচ সদস্য। ধৃতদের মধ্যে দু’জন মহিলা। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক। এই পাঁচজনকে ইম্ফল পূর্ব, কাকচিং এবং বিষ্ণুপুর জেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মণিপুর পুলিশ জানিয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ে মানুষকে ভয় দেখানো, জোর করে টাকা আদায় এবং বেআইনি কাজকর্মের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী খুব তাড়াতাড়ি মণিপুরে আসবেন বলে জানা গিয়েছে। তাই রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। বছর খানেক আগে মণিপুর হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে বলেছিল। এরপর থেকেই রাজ্যে শুরু হয় জাতিগত অশান্তি। কুকি সম্প্রদায় এই নির্দেশের বিরুদ্ধে পথে নামে এবং ধীরে ধীরে তা রূপ নেয় ভয়াবহ সংঘর্ষে। এখন পর্যন্ত দু’শোরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষ ঘরছাড়া।
এমন এক জটিল পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার কুকি জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি করে। চুক্তিতে বলা হয়েছে, কুকি গোষ্ঠীগুলি ভবিষ্যতে মণিপুর থেকে আলাদা হয়ে পৃথক রাজ্য গঠনের দাবি তুলতে পারবে না। এছাড়া তাদের জঙ্গি শিবিরের সংখ্যা কমাতে হবে এবং যেসব ক্যাম্প ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রয়েছে, সেগুলি সরিয়ে ফেলতে হবে। অস্ত্রসম্ভার জমা দিতে হবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘাঁটিতে।
চুক্তি অনুযায়ী, ভবিষ্যতে কুকি জঙ্গিরা নিয়মভঙ্গ করলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে চুক্তিও বাতিল করা যেতে পারে। চুক্তি হওয়ার পর কুকি-জো কাউন্সিল জানিয়েছে, মণিপুরের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সড়ক নম্বর ২ তারা খুলে দেবে, যাতে সাধারণ মানুষ এবং প্রয়োজনীয় পণ্য সহজে চলাচল করতে পারে।
এই ঘটনার পরেই সমতল অঞ্চলে বসবাসকারী মেইতেই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নতুন করে সক্রিয় হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। মেইতেইদের একাংশের অভিযোগ, কেন্দ্র তাঁদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই কুকি গোষ্ঠীর সঙ্গে সরাসরি চুক্তি করেছে, যা তাঁদের প্রতি অবিচার।