দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। খরার আশঙ্কা কাটিয়ে অবশেষে রবিবার মরসুমের প্রথম তুষারপাতে ঢেকে গেল কাশ্মীরের বিস্তীর্ণ এলাকা। মৌসম ভবনের পূর্বাভাস মতোই গুরেজ, ওয়ারওয়ান উপত্যকা, সিন্থান টপ, সোনমার্গ এবং রাজদান পাসে ব্যাপক তুষারপাত হয়েছে। নতুন করে বরফ পড়েছে কার্গিল ও দ্রাসের একাধিক অংশেও। একই সঙ্গে সমতলে শুরু হয়েছে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। তাপমাত্রা আরও নামলে সমতল এলাকাতেও তুষারপাত হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
বরফ পড়তেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন কাশ্মীরের বাসিন্দারা। গত দু’মাস ধরে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টি বা তুষারপাত না হওয়ায় জলসঙ্কট ও পর্যটক হারানোর আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছিল। কোথাও কোথাও পানীয় জলের সমস্যা দেখা দিতেও শুরু করেছিল। এই পরিস্থিতিতে মরসুমের প্রথম তুষারপাত কাশ্মীরবাসীর কাছে আশার সঞ্চার করেছে।
রবিবার ভোরে চিল্লাই কালানের প্রথম দিনেই বরফে ঢেকে যায় পাহাড়ি অঞ্চল। কাশ্মীরের সবচেয়ে কঠিন শীতকালীন পর্ব চিল্লাই কালান টানা ৪০ দিন ধরে চলে। ২১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এই সময়ে সারা বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শীত পড়ে ভূস্বর্গে। এই পর্বে নিয়মিত তুষারপাত না হলে স্বাভাবিক জলচক্র ব্যাহত হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও বিশেষজ্ঞরা।
তুষারপাতের পূর্বাভাস সামনে আসার পরই শনিবার প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। শীত মোকাবিলায় আধিকারিকদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন তিনি। বিশেষ করে পানীয় জল ও বিদ্যুৎ পরিষেবা যাতে ব্যাহত না হয়, সে দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল, বরফ না পড়লে কাশ্মীর শুধু পর্যটকই হারাবে না, তার সরাসরি প্রভাব পড়বে রাজ্যের অর্থনীতিতেও।
ওমরের আশা, এই তুষারপাত দূষণ কমাতে সাহায্য করবে এবং নতুন করে পর্যটকদের আগমন বাড়াবে। শীতকালীন পর্যটনের উপর কাশ্মীরের বড় অংশের অর্থনীতি নির্ভরশীল। বরফ না থাকলে সেই ব্যবসা মারাত্মক ধাক্কা খায়। ফলে মরসুমের শুরুতেই তুষারপাত হওয়ায় হোটেল ও পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষজনও আশাবাদী।
তবে একই সঙ্গে উদ্বেগও রয়েছে। বিজ্ঞানীদের একাংশের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কাশ্মীরেও স্পষ্ট। হিমবাহ দ্রুত গলছে, বৃষ্টিপাতের ধরন পাল্টে যাচ্ছে। এই প্রবণতা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে জলসঙ্কট আরও গভীর হতে পারে। সেই কারণে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় বার বার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার কথাও উঠছে।
এই মুহূর্তে অবশ্য বরফে ঢাকা কাশ্মীর উপত্যকা নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। প্রকৃতির এই স্বস্তির বার্তায় আপাতত খরার ভয় অনেকটাই দূরে সরল বলেই মনে করছেন কাশ্মীরবাসীরা।