দেশীয় প্রযুক্তিতে যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরি হবে ভারতে

বিদেশের উপর নির্ভরতা কমিয়ে এবার দেশীয় প্রযুক্তিতে যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরি হবে ভারতে। ভারতীয় বায়ুসেনার জন্য এই প্রকল্পে ৬৫ হাজার কোটি টাকার কাজ শুরু করেছে ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা তথা ডিআরডিও। ২০৩৫ সালের মধ্যে পঞ্চম প্রজন্মের এই যুদ্ধবিমানের উপযোগী ইঞ্জিন তৈরি এবং বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করাই এর লক্ষ্য। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হওয়ার পথে এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। 

বিদেশের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি যুদ্ধবিমান তেজসের উৎপাদনে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আমেরিকা থেকে সময়মতো এফ৪০৪ ইঞ্জিন এসে না পৌঁছোনোয় নির্ধারিত সময়সীমার প্রায় আড়াই বছর পরে ভারতীয় বায়ুসেনাকে মাত্র ২ টি ‘তেজস মার্ক-১এ’ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করতে চলেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান নির্মাণ সংস্থা ‘হিন্দুস্থান অ্যারোনটিকস লিমিটেড’ তথা হ্যাল। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘আত্মনির্ভর ভারত’ এর লক্ষ্যেই এগোচ্ছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।

সরকারি সূত্রে খবর, ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা-র এই প্রকল্পের আনুমানিক খরচ ৬৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ২০৩৫ সালের মধ্যে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের উপযোগী ইঞ্জিনের নির্মাণ এবং বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করাই এই কর্মসূচির লক্ষ্য। ডিআরডিও-র অধীন ‘গ্যাস টারবাইন গবেষণা প্রতিষ্ঠান’ তথা জিটিআরই-র প্রধান এসভি রমনা মূর্তি জানিয়েছেন, দেশে বর্তমানে গবেষণা ও নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায়ে থাকা বিভিন্ন মডেলের যুদ্ধবিমান নির্মাণ প্রকল্পের জন্য প্রায় ১১০০ ইঞ্জিনের প্রয়োজন হবে। তিনি বলেছেন, ‘দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি যুদ্ধবিমানের জন্য ইঞ্জিনের চাহিদাপূরণই লক্ষ্য। আগামী এক দশকের চাহিদা পূরণের জন্য উৎপাদন শুরু করা হবে।’ 


গত ১৫ আগস্ট লালকেল্লায় স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় দেশীয় প্রযুক্তিতে জেট ইঞ্জিন নির্মাণের কথা ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তার পরেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এবং ডিআরডিও-র তরফে বিষয়টি নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়। 

ভারতকে তেজস যুদ্ধবিমানের জন্য জিই-৪০৪ ইঞ্জিন দিতে শুরু করেছে মার্কিন সংস্থা জেনারেল ইলেকট্রিক। উল্লেখ্য, তেজস মার্ক ১-এ যুদ্ধবিমানের জন্য হ্যাল-এর ৯৯টি ইঞ্জিন পাওয়ার কথা জেনাারেল ইলেকট্রিক থেকে। চুক্তি অনুযায়ী, ২ বছর আগে থেকেই ‘জিই অ্যারোস্পেস’’-এর এই ইঞ্জিনগুলি সরবরাহ শুরু করার কথা ছিল । কিন্তু নির্ধারিত সময়ের ২ বছর বিলম্বের পর থেকে জিই অ্যারোস্পেস ইঞ্জিন সরবরাহ শুরু করে।  এর আগে তেজস যুদ্ধবিমানের সরবরাহ নিয়ে হ্যালের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন বায়ুসেনা প্রধান। ভারতীয় বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিং বলেছিলেন, বায়ুসেনার হাতে সময়মতো তেজস যুদ্ধবিমান তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্যালস-এর উপর ভরসা রাখতে পারছেন না তিনি। 

প্রসঙ্গত, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে বায়ুসেনাকে ১৬টি তেজস যুদ্ধবিমান সরবরাহ করা কথা ছিল হ্যাল-এর। সেই লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয় হ্যাল। রিপোর্ট অনুযায়ী, তেজস যুদ্ধবিমান ভারতে তৈরি করা হলেও তার ইঞ্জিন সরবরাহের কথা জেনারেল ইলেকট্রিকের। কিন্তু তা সময়মতো সরবরাহ করা হচ্ছেনা।  

এই বিষয়ে গত জুন মাসে হ্যাল-এর চেয়ারম্যান তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডিকে সুনীল তেজস সরবরাহে বিলম্বের জন্য আমেরিকার দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন। তিনি জানান, ওই যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন সরবরাহকারী মার্কিন সংস্থা ‘জিই অ্যারোস্পেস’-এর দেরির কারণেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিমানগুলি পৌঁছে দিতে দেরি হচ্ছে তাঁদের।হ্যাল-প্রধান বলেছিলেন, ‘আমাদের বিমান তৈরি রয়েছে। এই মুহূর্তে আমাদের কাছে ৬টি বিমান রয়েছে। কিন্তু এখনও মার্কিন সংস্থা থেকে ইঞ্জিন সরবরাহ করা হয়নি। ২০২৩ সালে তাদের ইঞ্জিন পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু এত দিন পর্যন্ত আমাদের কাছে মাত্র ১টি ইঞ্জিন এসে পৌঁছেছে।’

দেশীয় প্রযুক্তিতে যুদ্ধবিমান তৈরি প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রকল্পটি দেশীয় প্রতিরক্ষা  উৎপাদন বৃদ্ধি এবং আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্য বাস্তবায়নের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।