পেঁয়াজ বিক্রি করে কেজি প্রতি ১ টাকাও পেলেন না, সর্বশান্ত মহারাষ্ট্রের কৃষকরা

দেশের অর্থনীতি নিয়ে প্রতিদিন নানান গর্বের বাণী শোনাচ্ছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর ঘোষণা, বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির তকমা ভারতের ঝুলিতে এল বলে। সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দিকে এগোতে থাকা সেই দেশের কৃষকরা সর্বস্ব হারিয়ে আজ পথে বসতে বাধ্য হচ্ছেন, আত্মহত্যার কথা ভাবছেন। দেশের কৃষকদের অবস্থার আজও কোনও বদল নেই। বর্তমান পরিস্থিতি বলছে দেশের অন্নদাতাদের অবস্থা খারাপ থেকে খারাপ হচ্ছে। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ বিজেপি শাসিত রাজ্য মহারাষ্ট্র।

জানা গিয়েছে, মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ চাষিদের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, আজ তাঁরা পথে বসে হাহাকার করতে শুরু করেছেন। কারণ পেয়াঁজের সঠিক মূল্য না পাওয়া। পরিস্থিতি বলছে, ৬৬ হাজার টাকা খরচ করে এ বছর পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন পুনের সুদাম ইঙ্গেল। অতিবৃষ্টিতে সেই ফসলের প্রায় সবটাই শেষ। ব্যাপক ক্ষতির পর মাত্র ৭৫০ কেজি পেয়াঁজ মাঠ থেকে তুলতে পেরেছিলেন সুদাম। ভেবেছিলেন, এই পেয়াঁজ বিক্রি করে আর যাই হোক পরিবারকে না খেয়ে মরতে হবে না।

কিন্তু গত শুক্রবার পুরন্ধর বাজারে গিয়ে যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেন তারপর হাহাকার করা ছাড়া তাঁর কাছে আর কোনও উপায় নেই। সেই পেঁয়াজ বিক্রি করে মাত্র ৬৬৪ টাকা পেলেন তিনি। অর্থাৎ প্রতি কেজি পেয়াঁজদের পরিবর্তে ১ টাকাও পাননি তিনি। এই দাম পাওয়ার পর সুদাম জানিয়েছেন, এখনও দেড় একর জমির পেঁয়াজ তোলা বাকি। সেটা মাঠ থেকে না তুলে নষ্ট করে দেব। এবার বোধহয় বুঝতে পারছেন কেন কৃষক আত্মহত্যায় মহারাষ্ট্র শীর্ষে।


শুধু সুদাম নয়, মহারাষ্ট্রের কৃষকদের এই দুর্দশা এখন নিত্যকার ছবি। একদিকে অতিবৃষ্টি, অন্যদিকে দামের লাগামছাড়া পতন। সবকিছুর জন্য ভুগতে হচ্ছে কৃষকদেরই। তবে এই চিত্র শুধু পেঁয়াজচাষিদের নয়, টমেটো, আলু, সোয়াবিন-সহ ফলের চাষ করা কৃষদেরও মাথায় হাত। কারণ দামও ব্যাপকভাবে পড়ে গিয়েছে। সবমিলিয়ে দীপাবলির উৎসবে যেখানে কৃষকদের মুখে হাসি ফোটা কথা সেখানে তাঁদের ঘরে আঁধার। এই অবস্থার পর বহু কৃষক যাঁরা অল্প জমিতে চাষ করেন, বলতে শুরু করেছেন, ঋণ নিয়ে চাষ করার পর যদি এই ক্ষতির মুখে পড়তে হয় তাহলে খাবো কী? ঋণ মেটাবো কী করে। এবার আত্মহত্যা ছাড়া গতি নেই।

পেঁয়াজ কৃষকদের যখন এহেন দুরাবস্থা ঠিক তখনই মহারাষ্ট্রের এক মন্ত্রীর পরামর্শে বিতর্ক তুঙ্গে। ঋণের দায়ে আত্মহত্যার কথা ঘুরপাক খাওয়া কৃষকদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে না এসে মন্ত্রীর উপদেশ, ‘আত্মহত্যা নয়, বিধায়ককে খুন করুন।’ মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রের অমরাবতী জেলায় এক জনসভায় বক্তব্য রাখছিলেন প্রহার জনশক্তি পার্টির নেতা তথা মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী বাচ্চু কুদু প্রকাশ্য জনসভা থেকে কৃষকদের উদ্দেশে বলেন,  “আত্মহত্যা কেন করবেন? পরিবর্তে বিধায়ককে খুন করে দিন।  কৃষকদের উচিত নগ্ন হয়ে বিধায়কের বাড়িতে গিয়ে ধরনা দেওয়া এবং তাঁর বাড়ির সামনে প্রস্রাব করা। এগুলি করতে পারলে এই সরকার শায়েস্তা হবে।”

বাচ্চুর মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে শিবসেনা নেতা তথা মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী সঞ্জয় শিরসাট বলেন, ‘বাচ্চু কুদু কৃষকদের উসকানি দিতে চাইছেন? কৃষকদের দিয়ে অপরাধ করাতে চাইছেন? জিভে লাগাম টানা উচিত ওনার। সেপ্টেম্বরে বন্যা ও অতি বৃষ্টির কারণে কৃষকরা বর্তমানে যথেষ্ট সমস্যায় রয়েছেন। বাচ্চু কি চাইছেন তাঁরা মানুষ খুন করুক?’

উল্লেখ্য, এশিয়ার বৃহত্তম পেঁয়াজের বাজার লাসালগাঁও এপিএমসি। জানা গিয়েছে, সেখানে গত সপ্তাহেও পেঁয়াজের দাম ছিল গড়ে ১০৫০ টাকা (১০.৫ টাকা প্রতি কেজি) কুইন্টাল। কিন্তু হঠাৎই এই দামে মারাত্মক পতন দেখা দিয়েছে।  এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম তিনমাসে মহারাষ্ট্রে আত্মঘাতী হন ৭৬৭ জন কৃষক। শুধু তাই নয়, গোটা দেশেও এই পরিস্থিতি ভয়াবহ। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর সরকার আসার পর প্রথম আট বছরে কৃষক আত্মহত‌্যার সংখ‌্যা ১ লক্ষ ছাড়িয়েছে।