আজ কৃষকদের ভারত বন্ধ

কৃষক আন্দোলন (Photo: Twitter/@theranjanyadav)

দ্বাদশ দিনে পড়ল কৃষক আন্দোলন, কিন্তু সমাধান সূত্র মিলল না। ইতিমধ্যে, কেন্দ্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কৃষক ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের পাঁচদফা বৈঠক হলেও তা কার্যত ফলপ্রসু হয়নি। শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলােয় কৃষকরা নতুন করে মিছিল করছেন। আজকের ভারত বনধ নিয়ে আশাবাসী কৃষক ইউনিয়নগুলাে।

ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের মুখপাত্র রাকেশ তিকায়েত বলেন, ‘আমরা প্রতিবাদ আন্দোলন প্রদর্শন করছি এটা স্পষ্ট করে দেওয়ার লক্ষ্যে যে কেন্দ্রের কৃষি নীতিকে আমরা সমর্থন করি না। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চলবে’। আন্দোলনরত কৃষকরা তাদের আন্দোলনকে সমর্থন করার জন্য দেশবাসীর কাছে আর্জি করেছেন। তাদের বক্তব্য, ‘শান্তিপূর্ণভাবে চলা আন্দোলনকে সমর্থন করুন। প্রতিবাদ বিক্ষোভ প্রদর্শনের অর্থ কখনােই সাধারণ মানুষের জীবনে সমস্যা তৈরি করা নয়’। 

ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের মুখপাত্র বলেন, ‘আগামিকাল সকাল এগারােটা থেকে দুপুর তিনটে পর্যন্ত বনধ কর্মসূচী পালন হবে। এটা প্রতীকী আন্দোলন। সকাল এগারােটা থেকে বন্ধ কর্মসূচী শুরু করা হবে- ফলে সাধারণ মানুষের অফিস যেতে সমস্যা হবে না। জরুরি পরিষেবা চালু থাকবে’।


ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হরিন্দর সিং লাখােয়াল বলেন, কৃষক ইউনিয়নগুলাের সদস্যরা দেশের সমস্ত জাতীয় সড়কগুলােয় অবরােধ করবেন। টোল প্লাজা গুলােয় দখল নেবেন। তাঁর কথায়, বেশ কয়েকটি রাজ্যে ট্রাক চলাচল ব্যাহত হবে- কেননা, সমস্ত মােটর ট্রান্সপাের্ট ইউনিয়নগুলাে আগামিকালের কৃষকদের ডাকা ভারত বনধকে সমর্থন জানিয়েছে।

প্রতিটি রাজ্যে শান্তিপূর্ণ বন্ধ কর্মসূচী পালন করার পাশাপাশি, জেলাশাসক ও কমিশনারদের দফতরে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। ভারত বন্ধের জেরে শহরের ফল ও শাক-সজি সরবরাহে ঘাটতি হতে পারে। আজাদপুর মান্ডির চেয়ারম্যান আদিল আহমেদ খান বলেন, আমাদের ব্যাবসায়ীদের বেশিরভাগই ভারত বন্ধের ডাককে সমর্থন জানিয়েছেন। গাজিপুর, ওখাড়া ও নারেল মান্ডিগুলােতে বনধের প্রভাব পড়বে। মহারাষ্ট্রের ভাসি এগ্রিকালচারাল প্রডিউস মার্কেট কমিটি আগামিকাল বন্ধ থাকবে।

ফলে শাকসজি সাপ্লাইয়ে সমস্যা হবে। তবে শহরের অন্য মান্ডিগুলাে বন্ধ থাকবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। দিল্লি ও তামিলনাড়ুতে ক্যাব ও ট্যাক্সি ইউনিয়নগুলাের বেশিরভাগ আগামিকালের বন্ধকে সমর্থন জানিয়েছে। ফলে ওই দুই শহরের নিত্যযাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হবে। ব্যাঙ্ক ইউনিয়নগুলাে কৃষকদের ডাকা ভারত বন্ধকে সমর্থন করছে। তবে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা ব্যাহত হবে না।

কৃষক ইউনিয়নগুলাের তরফে কৃষক আন্দোলনকে আরও জোরদার করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। আগামি বুধবার কেন্দ্র ও কৃষক ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের ষষ্ঠ দফা বৈঠক হবে। নতুন কৃষি আইনগুলাে প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় কৃষক ইউনিয়নগুলাের প্রতিনিধিরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কেন্দ্র নতুন তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নিতে হবে। যদি প্রত্যাহার করা না হয়, তাহলে আন্দোলনকে আরও জোরদার করা হবে।

কৃষকদের উদ্বেগের সমাধান করার লক্ষ্যে সরকার সমাধান সূত্র খোঁজার ব্যাপারে কেন্দ্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও কৃষকদের আর্জি করা হচ্ছে, প্রবীণ ও শিশুদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে আন্দোলনকে শিথিল করতে। পাশাপাশি, এটাও বলা হয় দেশের কৃষকদের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রয়ােজনে নতুন কৃষি আইন সংশােধনের ব্যাপারটি কেন্দ্র ভেবে দেখতে পারে।

কৃষকরা মূলত ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন- নতুন আইনে যা স্পষ্ট করে উল্লেখ করা নেই। কেন্দ্রের তরফে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়ার ব্যাপারে। লাগাতার আশ্বাস দেওয়ার পরও চলতি সপ্তাহে দু’দফা বৈঠক ব্যর্থ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে উচ্চপর্যায়ে বৈঠকে বিতর্কিত কৃষি আইনের প্রস্তাবিত সংশােধনগুলাে নিয়ে বেশ কয়েক ঘন্টা বৈঠক হয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলােয় দেশে এটাই বৃহত্তম কৃষক আন্দোলন, যেখানে করােনা সংক্রমণের প্রকোপকে ভুলে শহরের প্রান্তে কয়েক লক্ষ কৃষক জড়াে হয়ে কৃষক আন্দোলন করছেন। তাদের স্পষ্ট বক্তব্য, ন্যূনতম মূল্যের দাবিতে মৌখিক নয়, লিখিত আশ্বাস চান।