তীব্র যানজটে অচল মহাকুম্ভে যাওয়ার পথ। বসন্ত পঞ্চমীর পর আবারও একটা পুণ্যস্নান মহাকুম্ভে। আগামী বুধবার মাঘী পূর্ণিমা। এই পুণ্য তিথিতে কোটি কোটি পুণ্যার্থী সঙ্গমে ডুব দেওয়ার আশায় মহাকুম্ভমুখী। এর জেরে প্রয়াগরাজে ঢোকার আগেই ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা জুড়ে যানজটে জেরবার মানুষ। মনে করা হচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম যানজট এটি। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে প্রয়াগরাজ সঙ্গম স্টেশন। যদিও প্রয়াগরাজ জংশন বন্ধ নয়। প্রয়াগরাজ-সহ অন্যান্য স্টেশনে ভিড় উপচে পড়ায় প্ল্যাটফর্মগুলিতে জিআরপি এবং আরপিএফ কর্মীদের মোতায়েন করা হয়েছে। প্ল্যাটফর্মের উপর নজর রাখছেন নিরাপত্তা কর্মীরাও। প্রতিটি কোচও পরিবদর্শন করছেন তাঁরা। রবিবার উত্তর লখনউ ডিভিশন প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আরপিএফ এবং জিআরপি-র আধিকারিকদেরও স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে কোনওরকম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় এবং ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন না ঘটে সেদিকে নজর রাখার।
মহাকুম্ভ মেলার দিকে যাওয়ার রাস্তাগুলিতে দীর্ঘ যানজটের ছবি। রবিবার থেকেই এই দীর্ঘ যানজটের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সমাজ মাধ্যমে। সোমবার সেই যানজট আরও দীর্ঘ হয়। রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে পড়েন কয়েক লক্ষ ভক্ত। কুম্ভমুখী গাড়ি, যাঁদের ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে, তাঁরা অনেকেই গাড়ি ঘুরিয়ে নেন। কিন্তু তাতেও এড়ানো যায়নি সমস্যা। যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই শুধু গাড়ি আর গাড়ি। কোনও দিক থেকেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। চারি দিকে শুধু গাড়ির হর্ন আর মানুষের কলরবে হৈ হৈ পরিস্থিতি। সকলেই চান এগিয়ে যেতে, কিন্তু তীব্র যানজট কাটিয়ে কোনওদিকেই এগিয়ে যাওয়ার কোনওই উপায় নেই। শুধু ছোট, বড় যাত্রিবাহী গাড়ি নয়, পণ্যবাহী লরি, ট্রাক, এমনকি অ্যাম্বুল্যান্সও ফেঁসে যায় প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই যানজটে। কর্তব্যরত পুলিশদের বার বার বলতে শোনা গিয়েছে, ‘দয়া করে আর এগোবেন না। ফিরে যান!’
পরিস্থিতির জেরে রাজ্য পুলিশ বিভিন্ন জেলায় যান চলাচল বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে, জাতীয় সড়কে আটকে পড়ছে শ’য়ে শ’য়ে গাড়ি। যাওয়ার পথে এই অব্যবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে উত্তরপ্রদেশ সরকারের ভূমিকা নিয়ে। পুণ্যার্থীদের দুর্ভোগের কথা তুলে উত্তরপ্রদেশ সরকারের এই ব্যবস্থাপনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। মহাকুম্ভে কোটি কোটি মানুষের ভিড় হবে, তা আগে থেকেই অনুমান করেছিল সরকার। মেলা শুরুর আগে থেকেই পুণ্যার্থীদের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন পরিসংখ্যানও দিয়েছে আদিত্যনাথের সরকার। কোটি কোটি পুণ্যার্থীর সুরক্ষা নিয়েও ঢালাও প্রচার করা হয়। দাবি করা হয় ‘ওয়ার্ল্ড ক্লাস ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট’-এর। অথচ একের পর এক অব্যবস্থার কারণে ঘটে গিয়েছে নানা দুর্ঘটনা। পদপিষ্টের ঘটনা ঘটেছে, একাধিকবার অগ্নিকাণ্ড, এরপর যানজটে জেরবার লক্ষ লক্ষ ভক্ত।
সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব প্রশাসনের এই অনুষ্ঠান পরিচালনার তীব্র সমালোচনা করেন। মহাকুম্ভ আয়োজনে যোগী সরকার ব্যর্থ, দাবি সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখইলেশ যাদবের। আটকে পড়া ভক্তদের দুর্দশার সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। তাঁর আবেদন, ‘যানজটে আটকে থাকা ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত, ক্লান্ত তীর্থযাত্রীদের মানবিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখা উচিত।’ সাধারণ ভক্তরা কি মানুষ নন, প্রশ্ন তাঁর। তাঁর আরও দাবি, মহাকুম্ভের সময় উত্তরপ্রদেশে যানবাহন টোলমুক্ত করা উচিত। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘সিনেমা বা বিনোদন করমুক্ত করা যেতে পারে, মহাকুম্ভ উপলক্ষে আসা গাড়ির জন্য কেন তা করা হবে না?’
মধ্যপ্রদেশ, বিহার ও অন্যান্য রাজ্য থেকে জোড়া সড়কগুলির সবকটিই গাড়ির ভিড়ে অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে। রাস্তায় পুলিশ ভ্যান নিয়ে মধ্যপ্রদেশ প্রশাসন বিভিন্ন জায়গায় মাইকিং করছে। জনসাধারণ ও ভক্তদের প্রয়াগমুখী না হওয়ার জন্য বারবার করে অনুরোধ জানাচ্ছে। কাটনিতে পুলিশ লাউডস্পিকারের মাধ্যমে ঘোষণা করেছে যে সোমবার পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রয়াগরাজ সঙ্গম স্টেশন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। লখনৌয়ের উত্তর রেলের আধিকারিক কুলদীপ তিওয়ারি জানান, স্টেশনের বাইরে এতই ভিড় যে, পুণ্যার্থীরাও স্টেশন ছেড়ে বার হতে পারছেন না। সব দিক বিবেচনা করেই শুক্রবার পর্যন্ত প্রয়াগরাজ সঙ্গম স্টেশন বন্ধ রাখা হচ্ছে।