বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কা সফরে যাচ্ছেন। তিনি এই সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিশেষ দূত হিসেবে। কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হওয়ার কথা। বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, এই সফর ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির অংশ। পাশাপাশি, ঘূর্ণিঝড় ‘দিতওয়া’-র পর শ্রীলঙ্কায় যে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে, তার প্রেক্ষিতেই এই সফরের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ নভেম্বর থেকে ভারত ‘অপারেশন সাগর-বন্ধু’ শুরু করেছে। এই অভিযানের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কাকে মানবিক সহায়তা এবং বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সাহায্য পাঠানো হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় ‘দিতওয়া’র কারণে শ্রীলঙ্কার বহু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাণহানির পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ঘরবাড়ি, রাস্তা ও পরিকাঠামোর। এই কঠিন সময় প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছে ভারত।
বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, গত সপ্তাহে ‘অপারেশন সাগর-বন্ধু’-র আওতায় বন্যা ও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। এর আগে, ১৪ ডিসেম্বর ভারতীয় বায়ুসেনার সি-১৭ গ্লোবমাস্টার বিমানে প্রথম দফায় ১০ টন ওষুধ এবং ১৫ টন শুকনো রেশন শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয়। এই সহায়তা দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার জন্য ভারতীয় সেনা ও প্রশাসন একযোগে কাজ করছে।
শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার সন্তোষ ঝা গত ১৮ ডিসেম্বর কলম্বোর কোলোন্নাওয়া এলাকা এবং ভট্টালার ভক্তিবেদান্ত চিলড্রেন হোম ‘গোকুলম’ পরিদর্শন করেন। ঘূর্ণিঝড়ে এই এলাকাগুলি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাইকমিশনার কোলোন্নাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির মধ্যে ত্রাণ কিট বিতরণ করেন। পাশাপাশি, কলম্বোর ইসকন মন্দিরে আশ্রয় নেওয়া ‘গোকুলম’-এর শিশুদের জন্যও সহায়তা সামগ্রী দেওয়া হয়।
বিদেশমন্ত্রক আরও জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত ১ ডিসেম্বর শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি অনুরা কুমারা দিসানায়েকের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তিনি ঝড়ে প্রাণহানি ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতির জন্য গভীর সমবেদনা জানান। পাশাপাশি, ‘অপারেশন সাগর-বন্ধু’র মাধ্যমে ভারতের পক্ষ থেকে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সংকটের সময় ভারতের জনগণ শ্রীলঙ্কার মানুষের পাশে আছে।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে ভারতের দ্রুত ও কার্যকর সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি উদ্ধারকারী দল ও ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর জন্য ভারতের প্রশংসা করেন। এদিকে, ভারতীয় হাইকমিশনার জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক করতে কাজ চলছে।
কিলিনোচি ও চিলাও-এর মধ্যে সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কিলিনোচি সেতু পরিষ্কার করে সেখানে বেলি ব্রিজ বসানোর পরিকল্পনাও রয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষের যাতায়াত সহজ হয়। ঘূর্ণিঝড় ‘দিতওয়া’র পর শ্রীলঙ্কার পাশে ‘ফার্স্ট রেসপন্ডার’ হিসেবে দাঁড়িয়ে ভারত আবারও প্রতিবেশী দেশের প্রতি তার দায়িত্ব ও বন্ধুত্বের বার্তা স্পষ্ট করল।