জাতীয় স্তরে ‘ভূতুড়ে ভোটার’ কাণ্ডকে ইস্যু করে সংসদ উত্তাল করতে যখন তৃণমূলের প্রস্তুতি তুঙ্গে ঠিক তখনই জাতীয় নির্বাচন কমিশনের বড় আশ্বাস। সোমবার জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা, ভোটার তালিকা থেকে ডুপ্লিকেট এপিক নম্বর (দুটি ভোটার কার্ডের একই নম্বর) আগামী ৩ মাসের মধ্যে সরানো হবে। তারা জানাল, ভবিষ্যতে একই এপিক নম্বর আর থাকবে না। ‘ডুপ্লিকেট’ এপিক নম্বরের ভোটারদের ইউনিক এপিক নম্বর (প্রতিটি ভোটার কার্ডের স্বতন্ত্র নম্বর) দেবে কমিশন। ভবিষ্যতে সকল ভোটারের জন্যই ইউনিক এপিক নম্বর পদ্ধতি চালু করা হবে।
নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে তৃণমূলের চাপের মুখে নতিস্বীকার বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যদিও এর আগে কমিশনের তরফে বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছিল, একই এপিক নম্বরে একাধিক ব্যক্তির নামে ভোটার কার্ড থাকা মানেই তাঁরা ভুয়ো ভোটার নন।
উল্লেখ্য, রাজ্য বিধানসভায় দাঁড়িয়ে প্রথমবার ‘ভূতুড়ে’ ভোটার ইস্যুতে অভিযোগ করতে দেখা গিয়েছিলো বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এরপর নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের মেগা সমাবেশ মঞ্চ থেকেও একই ইস্যুতে সরব হন তিনি। বিজেপিকে সরাসরি কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে তিনি দাবি করেন, ভুয়ো ভোটারদের ব্যবহার করে ভোট বাড়িয়ে ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচন জেতার চেষ্টা করছে গেরুয়া শিবির। তৃণমূল অভিযোগ করে, অনলাইন পদ্ধতিতে ভোটার লিস্টে নাম তোলার সুযোগ নিয়ে, কমিশনকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি ভোটার লিস্টে ভূতুড়ে ভোটার ঢুকিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ এনেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর ‘ভূতুড়ে’ ভোটার চিহ্নিতকরণে সুব্রত বক্সির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটিতে রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দলের একাধিক শীর্ষ নেতৃত্ব। তারই মাঝে আবার কমিশন বিবৃতি জারি করে জানিয়ে দেয়, একই এপিক নম্বরে একাধিক ভোটার কার্ড থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে কাউকে ‘ভুয়ো’ ভোটার বলে দাগিয়ে দেওয়া যাবে না।
কমিশনের এই যুক্তি নাকচ করে তৃণমূল কংগ্রেস তরফে প্রশ্ন তোলা হয়, আধার কার্ড, পাসপোর্টের মতো ভোটার কার্ডেও ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর নয় কেন? গত বৃহস্পতিবার এই সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে কমিশনের দপ্তরে যান চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য প্রায় প্রতিটি বিধানসভাতেই ২০ থেকে ৩০ হাজার ভূতুড়ে ভোটার ঢোকানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে তৃণমূল নেত্রী বলেছিলেন, ‘বহিরাগতদের সম্মান করলেও বাংলাকে তাদের দখলে যেতে দেব না। এটা বাংলা দখলের খেলা। এই খেলায় জিততে আর একটা গণ জাগরণ হবে প্রয়োজনে।’ এদিন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে তৃণমূলের বড় জয় বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্বরা।
অন্যদিকে, কমিশনের ইউনিক এপিক নম্বর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র তথা সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের জানিয়েছেন, ‘এক জনের সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের নম্বরের সঙ্গে আর এক জনের নম্বর মিলে গিয়ে থাকলে, তা সংশোধন করে দেওয়া যেতেই পারে, সেই কথা কমিশন আগেই জানিয়েছিল। সেটাই আরও স্পষ্ট ভাবে জানানো হল।’