গঙ্গাসাগরে নিখোঁজ হন মধ্যপ্রদেশের রাতিয়া! ২০ বছর পরে হদিশ বাংলাদেশে

বাংলাদেশে ওই খোঁজ পাওয়া বৃদ্ধা রাতিয়া আহিরওয়ার।

অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার গঙ্গাসাগর মেলায় হারিয়ে যাওয়ার ২০ বছর পরে হদিশ মিলল রাতিয়া আহিরওয়ারের। মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন মধ্যপ্রদেশের সাগর জেলার বান্দা থানা এলাকার ওই বৃদ্ধা রয়েছেন বাংলাদেশেই। তাঁর দৃষ্টিশক্তি লোপ পেয়েছে। কানেও ঠিকমতো শুনতে পান না। তবু ভিডিওকলে তাঁকে দেখেই কেঁদে ফেললেন ছেলে রাজেশ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার শেষে যেন অলৌকিকভাবে ফিরে এলেন তাঁর মা-কে।

জানা গিয়েছে, মধ্যপ্রদেশের সাগর জেলার ধর্মপ্রাণ এই সত্তরোর্ধা বৃদ্ধা দুই দশক আগে স্বামী ও গ্রামের পরিচিতদের সঙ্গে গঙ্গাসাগর মেলায় তীর্থে গিয়েছিলেন। সংক্রান্তির পূণ্যস্নানে প্রতিবারই হাজার হাজার তীর্থযাত্রীর ভিড় হয়। সেই ভিড়েই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান রাতিয়া। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী স্বামীর নাম মুখে আনেন না। ফলে কাউকে নিজের পরিচয়ও জানাতে পারেননি। মেলা শেষে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি, থানায় নিখোঁজ ডায়েরি— এত সবকিছু সত্ত্বেও কোনও সন্ধান মেলেনি তাঁর।

এরপর কেটে গিয়েছে প্রায় দীর্ঘ ২০ বছর। পরিবারের আশা প্রায় নিভে গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎই বাংলাদেশ থেকে আসা একটি খবরে আশার আলো দেখা দে। জানা যায়, মানসিক ভারসাম্যহীন এক বৃদ্ধা বহু বছর ধরে একটি সংগঠনের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। হ্যাম রেডিওর সৌজন্যে খবর পৌঁছনোর পর ভারতীয় কর্তৃপক্ষও যোগাযোগ শুরু করে। বৃদ্ধার শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যাওয়ায় পরিবার-পরিজনের ছবি দেখানো হলেও তিনি কিছুই বুঝতে পারেননি। শেষে তাঁর ছেলে রাজেশ ভিডিওকলে ক্ষীণ মুখটি দেখেই নিশ্চিত হয়ে যান— ২০ বছর আগে এটাই তাঁর হারিয়ে যাওয়া মা রাতিয়া।


পরিবারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করা হয়েছে বাংলাদেশ হাই কমিশন, মধ্যপ্রদেশ সরকার এবং ভারত সরকারের সঙ্গে। এখন দুই দেশের প্রশাসনিক সহযোগিতায় তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি চলছে। দুই দশকের যন্ত্রণার শেষে মাকে ফিরে পাওয়ার আশাতেও বিশ্বাস করতে পারছেন না রাজেশ। পুরনো স্মৃতি মনে পড়তেই তাঁর গলা ভিজে ওঠে, চোখ ভরে আসে জল।

গ্রামে এখন উৎসবের আবহ। পরিবার বলছে, ‘মাকে ফিরে পাব, এমনটা কল্পনাও করিনি। যেন বহু বছরের অন্ধকার ভেদ করে আলো ফিরে এলো।’