ভুয়ো ডিগ্রির কালো জাল কাটাতে এবার মাঠে নেমে পড়ল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি ও হরিয়ানার বিভিন্ন স্থানে একযোগে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। হাপুরের মনাড ইউনিভার্সিটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা এই ভুয়ো ডিগ্রি চক্রটি আর্থিক লেনদেন ও অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।
ইডি’র লখনউ আঞ্চলিক দপ্তরের নেতৃত্বে এই অভিযান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ সম্পর্কিত আইন অনুযায়ী শুরু হয়েছে। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, মনাড ইউনিভার্সিটি থেকে জাল ডিগ্রি ও সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগে যে প্রাথমিক তদন্ত চলছিল, তার সূত্র ধরেই এই সামগ্রিক তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে।
প্রথম দফায় মোট ১৬টি সন্দেহজনক স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। হাপুরের মূল ক্যাম্পাস মীরাট ও উন্নাওয়ের সরস্বতী মেডিক্যাল কলেজেও ইডি’র তল্লাশি চালিয়েছে। পাশাপাশি দিল্লি, ফরিদাবাদ, গুরগাঁও ও সোনিপতেও তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। তদন্তকারীরা বলছেন, এই চক্রটি দেশের একাধিক রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের টোপ দিয়ে কোটি কোটি টাকা আদায় করেছিল।
আদালতে পেশ করা ইডি’র তথ্য অনুযায়ী, ভুয়ো ডিগ্রি বিক্রির আড়ালে গৃহীত অর্থ বিভিন্ন ফ্রন্ট কোম্পানির মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়েছে। এই অপকর্মে মূল অভিযুক্ত বিষেন্দ্র সিং বা বিষেন্দ্র হুডা–র নাম উঠে এসেছে। তিনি বর্তমানে জেলবন্দি। পূর্বে ওই মামলায় স্পেশাল টাস্ক ফোর্স তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। রাজনৈতিকভাবে পরিচিত এই ব্যক্তি ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বহুজন সমাজ পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
এই তদন্ত অভিযানে তদন্তকারীরা এখন সেই অর্থ কোন পথে ঘুরে কোন সংস্থা বা ব্যক্তির কাছে পৌঁছেছে, তার খোঁজে শুরু করেছেন।
তাঁরা মূলত ওই অর্থের অনুসন্ধানের চেষ্টা করছেন। কোন ফ্রন্ট সংস্থা বা কোন ব্যক্তির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা সরানো হয়েছে, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে ইডি। তল্লাশিতে আটক করা নথি বিশ্লেষণের মাধ্যমে লেনদেনের রহস্য উন্মোচন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
ইডি সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, বহু সন্দেহভাজন ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছে। পুলিশের চার্জশিটে তাদের নাম ও বাসস্থান পাওয়া গিয়েছে। মনাড ইউনিভার্সিটি ও সরস্বতী মেডিক্যাল কলেজ ছাড়াও যেসব স্থানে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে, সেগুলো মূলত এই আর্থিক চক্রের পেছনে থাকা নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, শিক্ষার্থীদের কাছে জাল ডিগ্রির লোভ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আদায় করা হচ্ছিল। বিষয়টি তদন্তকারীদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ইডি কর্মকর্তাদের মতে, শিক্ষাক্ষেত্রের নৈতিক অবক্ষয় ও আর্থিক অপরাধ দুই দিক থেকেই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর মারাত্মক আঘাত। তাই কেবল অভিযুক্তদের শাস্তি নয়, ভবিষ্যতে এমন জালিয়াতি রোধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলা ও শিক্ষা দপ্তরের প্রতিনিধিরা জানান, প্রয়োজন পড়লে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলির কর্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা এবং তদন্ত শেষ হওয়ার পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শিক্ষামন্ত্রকের পক্ষ থেকেও অনুরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে নীতিগত পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে।
এভাবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় আঘাত হানা ভুয়ো ডিগ্রি চক্রের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার এই অভিযান শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষাসহ অর্থপাচারের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা জারি করেছে। তদন্তকারীরা বলছেন, এই অভিযান চলবে এবং প্রয়োজনীয় সকল আর্থিক ও নথি সংক্রান্ত প্রমাণ সংগ্রহ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।