কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডির এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলল মাদ্রাজ হাইকোর্ট। একটি মামলার শুনানিতে আদালত জানিয়েছে, ইডি কোনও ‘ড্রোন বা আত্মঘাতী অস্ত্র’ নয় যে তারা ইচ্ছামতো আক্রমণ করতে পারে কিংবা তারা কোনও ‘সুপার কপ’ও নয় যে তাদের নজরে আসা প্রতিটি বিষয়ে তদন্ত করার ক্ষমতা রয়েছে! অবশ্য এটাই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিকবার ইডির ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আদালত। এর আগে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, পিএমএলএ মামলার ১৯ নম্বর ধারায় অভিযুক্তকে ইডি গ্রেপ্তার করতে পারবে না। শুধু তাই নয়, শীর্ষ আদালত পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিল, আর্থিক প্রতারণা মামলায় জামিন পাওয়াই দস্তুর, জেলযাত্রা ব্যতিক্রম।
আরকেএম পাওয়ারজেন প্রাইভেট লিমিটেড নামে এক সংস্থার বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে এফআইআর দায়ের করে প্রথমে তদন্ত শুরু করে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই। ২০১৭ সালে অবশ্য সেই তদন্ত বন্ধ করে দেয় তারা। এদিকে ২০১৫ সাল থেকে পিএমএলএর অধীনে তদন্ত করছিল ইডি। গত ৩১ জানুারি ওই সংস্থার ৯০১ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত ফ্রিজ করে তারা। ইডির এই পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় সংস্থা। মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি এমএস রমেশ এবং বিচারপতি ভি লক্ষ্মীনারায়ণের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, ‘ইডি শুধু পিএমএলএ আইনের অধীনে কোনও অপরাধ সংগঠিত হলে বা অপরাধের পূর্ব ইঙ্গিত পেলে তদন্ত করতে পারে। পূর্ব অপরাধের ইঙ্গিত না মিললে পিএমএলএ-আইনের অধীনে তদন্ত করাটা প্রত্যাশিত নয়।’
বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, ইডি কোনও ‘সুপার কপ’ নয়, যে তাদের নজরে আসা প্রতিটা বিষয় নিয়েই তদন্তে নেমে পড়তে হবে। কোনও একটি অপরাধ সংগঠিত হলে, ইডিকে দেখতে হবে, সেটি তাদের তদন্ত ক্ষমতার আওতাধীন কিনা। সাধারণ ভাবে, আর্থিক তছরুপের মামলার আওতাধীন অপরাধগুলির ভিত্তিতেই তদন্তে নামার ক্ষমতা রয়েছে ইডি। আদালতের তুলনা অনুযায়ী, ইডি যেন এক ‘লিম্পেট মাইন’, যা জাহাজে লাগানো থাকে। যদি জাহাজই না থাকে, তাহলে ওই মাইন কার্যকর হতে পারে না। সেই ‘জাহাজ’ হল পিএমএলএ অনুযায়ী অপরাধ এবং সেই অপরাধ থেকে অর্জিত অর্থ। এই মামলার শুনানিতে আরকেএম পাওয়ারজেন প্রাইভেট লিমিটেডের আইনজীবী বি কুমারের সওয়াল, ইডি আদালতের আগের রায় উপেক্ষা করে স্থায়ী আমানত ফ্রিজ করেছে। তাদের কাছে এই মামলার কোনও নতুন তথ্য নেই।
সওয়াল-জবাব শেষে ইডির পদক্ষেপ (স্থায়ী আমানত ফ্রিজ) বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে মাদ্রাজ হাইকোর্ট। আদালতের মতে, ইডি যেহেতু নতুন কোনও তথ্য বা অপরাধের ইঙ্গিত দেখাতে পারেনি, তাই তাদের এই পদক্ষেপ আইনসম্মত নয়। মাদ্রাজ হাইকোর্টের এই রায় থেকে এটা স্পষ্ট যে, ইডি যদি যথাযথ তথ্যপ্রমাণ ছাড়া কোনও তদন্ত শুরু করে বা সম্পত্তি ফ্রিজ করে, তা আইনসঙ্গত নয়। সংস্থার বিরুদ্ধে কোনও অপরাধ হলে তার উপযুক্ত ভিত্তি থাকতে হবে। শুধুমাত্র সন্দেহ বা পুরনো মামলার ভিত্তিতে ইডি পদক্ষেপ করতে পারে না।