দিল্লিতে লালকেল্লার কাছে গাড়ি বিস্ফোরণের ঘটনায় উঠে এসেছে একজন কাশ্মীরের চিকিৎসকের নাম। যে গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেটি বিস্ফোরণের আগে ব্যবহার করছিলেন উমর মহম্মদ নামে কাশ্মীরের পুলওয়ামার একজন চিকিৎসক। জানা গিয়েছে, উমর ছিলেন পড়াশোনার প্রতি একনিষ্ঠ। বইয়ের পোকা। এরকম একজন মানুষ কীভাবে এমন নাশকতার ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হলেন তা নিয়ে ধন্দে রয়েছেন উমরের পরিবারের সদস্যরা। অন্যদিকে সোমবার দিল্লির কাছেই হরিয়ানার ফরিদাবাদ থেকে ধরা পড়েছে ৩৬০ কেজি আরডিএক্স (অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট) এবং ২৯০০ কেজি বিস্ফোরক। দিল্লির বিস্ফোরণ এবং ফরিদাবাদে বিস্ফোরক উদ্ধার এই দু’টি ঘটনার মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
জানা গিয়েছে সোমবার সন্ধ্যায় যে গাড়িটিতে বিস্ফোরণ ঘটে সেটিতে হরিয়ানার নাম্বার প্লেট লাগানো ছিল। সাদা রঙের ‘হুন্ডাই আই২০’ গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন ছিল মহম্মদ সলমন নামের এক ব্যক্তির নামে। সোমবার রাতে পুলিশ তাঁকে আটক করে জেরা করতে জানা যায় যে তিনি আর ওই গাড়ির মালিক নন। তিনি গাড়িটি বিক্রি করেছিলেন তারেক নামে পুলওয়ামার এক বাসিন্দাকে।
জানা গিয়েছে, ওই তারেক নামের ব্যক্তির কাছ থেকে গাড়িটি পেয়েছিলেন উমর। সোমবার লালকেল্লার কাছে একটি পার্কিং-এ গাড়িটি দাঁড় করানো ছিল। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় দুপুর ৩টে ১৯ মিনিট নাগাদ গাড়িটি লালকেল্লার কাছে সুনেহরি মসজিদের পার্কিং-এ দাঁড়িয়ে ছিল। গাড়ির ভিতরে নীল-কালো টিশার্ট পড়া উমরকে বসে থাকতে দেখা যায়। গাড়িটি সন্ধ্যা ৬টা ৪৮ মিনিট পর্যন্ত ওই পার্কিং এই দাঁড়িয়ে ছিল। তারপর পার্কিং ছেড়ে বেরোয় গাড়িটি এবং ৬টা ৫২ মিনিটে গাড়িটিতে বিস্ফোরণ হয়।
উমরের পরিচয় কী তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে আসছে। উমরের নাম এই বিস্ফোরণকাণ্ডের সঙ্গে জড়ানোর পর তাঁর পরিবারের সদস্যরা ওমরের ব্যাপারে তথ্যপ্রকাশ করেন। জানা গিয়েছে ৩৬ বছর বয়সি উমর শ্রীনগরের একটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে পড়াশুনো করছেন। তিনি ২০১৭ সালে এমবিবিএস পাশ করেছিলেন। উমরের পুলওয়ামার এক আত্মীয় জানান যে গত শুক্রবার উমরের সঙ্গে তাঁদের শেষবার কথা হয়। ওই আত্মীয় জানান যে যখনই উমর তাঁদের বাড়িতে আসতেন, ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসতেন। তিনি আরও জানান যে উমর নাশকতা করার মত মানুষই নন। তিনি অনেক কষ্ট করে পড়াশুনো করেছেন। উমর যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন তাঁর জন্য আত্মীয়রা অনেক কষ্ট করেছেন। জানা গিয়েছে যে উমরের বাগদান হয়ে গিয়েছে। গত দু’মাস উমর বাড়িতেও ছিলেন না। তাঁর কথায় উমর সারাক্ষণ পড়াশোনা করতেন। তাঁর বন্ধুর সংখ্যাও বেশি ছিল না।
অনুমান করা হচ্ছে, গোটা দিল্লিতে ধরপাকড় শুরু হওয়াতে তড়িঘড়ি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। ডাক্তার উমর মহম্মদকেই এখন দিল্লি বিস্ফোরণকাণ্ডের মূলচক্রী হিসাবে সন্দেহ করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে দু’জন সঙ্গীকে নিয়ে একটি আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করছিলেন উমর। ফরিদাবাদ-ভিত্তিক একটি বিশেষ সন্ত্রাস মডিউলের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন উমর। অনুমান করা হচ্ছে, প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক উদ্ধার হওয়ার পর সতর্ক হয়ে গিয়েছিলেন সন্দেহভাজনরা। এমন হতে পারে যে বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রাখা বিস্ফোরক গাড়িতে করে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল। ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে হয়তো গাড়িতে থাকা বিস্ফোরক নষ্ট কর দেওয়া হয় এই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে। একটি সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, বিস্ফোরণের ভিডিওতে বিস্ফোরণের পর কমলা রঙের আগুনের শিখা দেখা গিয়েছে। সাধারণত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকে বিস্ফোরণ ঘটলে কমলা রঙের আগুন দেখা যায়। ঘটনাচক্রে ফরিদাবাদ থেকেও উদ্ধার করা হয়েছে এই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট।