বাতাসে উড়ছে ছাই আর মৃতদেহ পােড়ার কটু গন্ধ, দিল্লিতে ২০ হাজার কোটি টাকার নতুন সংসদ ভবন নির্মাণের কাজ চলছে

নতুন সংসদ ভবন (Photo:SNS)

করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভয়ঙ্কর ধাক্কায় যখন দেশের রাজধানী দিল্লি শহর রূপ নিয়েছে এক ভয়াবহ মৃত্যুপুরীর, তখন এই মৃত্যুর মতাে স্তব্ধতার মধ্যেই ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ঝড়ের গতিতে গড়ে তােলা হচ্ছে নতুন সংসদ ভবন। সেই সঙ্গে চলছে সংসদ ভবন চত্বরে সৌন্দর্যায়নের কাজ।

শুধুমাত্র দিল্লি শহরেই কোভিড়ে দৈনিক মৃতের সংখ্যা হাজার ছুঁতে চলেছে। ক্রমাগত বেড়ে চলেছে চিতার সংখ্যা, তবু মৃতদেহ দাহ করার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে ২৪ ঘণ্টা থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত। দিল্লি এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুর্মূল হয়ে উঠেছে চিতার কাঠও। বাতাসে উড়ছে ছাই আর মৃতদেহ পােড়ানাের কটু গন্ধ। দাহ করার অপেক্ষায় সারি দিয়ে রাখা হয়েছে মৃতদেহ।

তারই ফাঁকে কোথাও রাস্তার কুকুর এসে খুবলে নিয়েছে মৃতের শরীর। এমনই নকুণ্ড হয়ে উঠেছে দিল্লি শহর। এ তাে শুধু দিল্লি শহরের ছবি। সারা দেশের কথা ভাবলে শিউরে উঠতে। হাসপাতালে শয্যার অভাব অক্সিজেন অমিল, মিলছে না মুমুর্ষ রােগীদের কোভিড়ের ওষুধও।


এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি। ব্রিটেনের ‘দ্য টাইমস’, অস্ট্রেলিয়ার ‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান’, আমেরিকার ‘টাইম’ এবং এরপর ফ্রান্সের ‘লা ম’ পত্রিকায় ভারতে এরকম ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য নরন্দ্রে মােদির ঔদ্ধত্য এবং শুধুমাত্র জনপ্রিয় বক্তৃতা দিয়ে বেড়ানােকে দায়ী করা হয়েছে। মােট কথা মােদির দর্শিতার অভাব, তার ঔদ্ধত্য ও উগ্র জাতীয়তাবাদ আমলাতান্ত্রিক অদক্ষতা—এসবের জন্যেই ভারতে নেমে এসেছে এমন অন্ধকার, এসব তাদের বক্তব্য।

এই মৃতুনগরী রাজধানীতে আবার চলছে আইপিএল ক্রিকেট ম্যাচ। এই ধরনের ম্যাচকে অনেকে সর্ববৃহৎ ক্রিকেট-জুয়া বলে থাকেন। শুধুমাত্র ব্যবসায়িক কারণেই এই খেলার আয়ােজন। দর্শকশূন্য মাঠ হলেও রয়েছে যাবতীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা, অ্যাম্বুলেন্স, কোভিড পরীক্ষার সবসরঞ্জাম।

এখন কি এরকম ব্যয়বহুল বিনােদনের সময়? প্রশ্ন তুলছেন দেশের ক্ষুব্ধ মানুষরাই। কাদের স্বার্থ রক্ষা করছে ভারতীয় ক্রিকেট বাের্ড? এক অস্ট্রেলিয় ক্রিকেটার এর বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছেন। অথচ ভারতীয় ক্রিকেটাররা নির্বিকার। মানুষের এইসব ক্ষোভের প্রতি দৃষ্টিপাত করার কোনও প্রয়ােজনই মনে করছে না কেন্দ্রের সরকার।

এরকম মৃত্যুনগরীর স্তব্ধ পরিবেশে তাই ২০ হাজার কোটি টাকার নতুন সংসদ ভন নির্মাণ এবং সংসদ ভবন চত্বরের সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পের কাজ ঝড়ের গতিতে এগিয়ে চলেছে। সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, যেদিন দিল্লি শহরেই দৈনিক সংক্রমণ ৩০ হাজারের কাছকাছি, সেই দিনই তিনটি নতুন ভবন নির্মাণের জন্যে দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, করােনার আবহে এই কাজ যাতে আটকে না যায়, তাই এই ‘প্রকল্পকে‘ জরুরি পরিষেবার অন্তর্ভুক্ত করেছে মােদি সরকার।

করােনার প্রাদুর্ভাবের কিছু আগে থেকেই এই প্রকল্পের ঘােষণা করা হয় দরপত্রও আহ্বান করা হয়। কিন্তু কারােনা না থাকলেও দেশের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে কেন এত বিপুল অর্থায় করে নতুন সংসদ ভবন গড়া হবে, এ প্রশ্নে আলােড়িত হয়েছিল জাতীয় রাজনীতি।

নতুন সংসদ ভন নির্মাণ কোনও জরুরি। কাজ নয়, কিন্তু সে কথায় কান দেয়নি সরকার বরং এখা এই ভয়ঙ্কর কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে সেই কাজকে জরুরি পরিষেবার আওতায় এনে আরও ত্বরান্বিত করল সরকার।

দিল্লি জুড়ে এখন লকডাউন চললেও এই নির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের আসা-যাওয়ার কোনও বাধা থাকছে না। খননকর্মী, রাজমিস্ত্রি আর লরির যাতায়াতের শব্দে ভরে আছে ইন্ডিয়া গেট সংলগ্ন এলাকায়। লকডাউন থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ১০৮ টি গাড়ি কে।

অর্থাৎ এই থমথমে পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে মােদি সরকার নতুন সংসদ ভবন নির্মাণ ও তার সৌন্দর্যায়নের কাজকে দ্রুত শেষ করতে চাইছে। যখন কোভিডে মানুষ পােকামাকড়ের মতাে মারা যাচ্ছে, তখন আইসিসিইউ, অক্সিজেন, ওষুধ বা টিকার জন্য প্রয়ােজনীয় অর্থ ব্যয় না করে কোটি কোটি টাকার মূল্যে নতুন ভবন গড়ে তােলাই সরকারের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল দেশের সংকটের সময় কেন এই বিলাসিতা?

খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রধানমন্ত্রীকে এখন রােম সম্রাট নীরাের সঙ্গে তুলনা করছেন দেশের মানুষ। রােম আগুনে ভস্মীভূত হওয়ার সময় বেহালা বাজাচ্ছিলেন নীরাে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজে মানুষের ক্ষোভ কিন্তু বাড়ছে।