কোভিড ডিউটিতে থাকা অবস্থায় প্রাণ হারিয়েছিলেন দিল্লির এক প্রধান শিক্ষক। কিন্তু তৎকালীন সরকারের প্রতিশ্রুতি মতো এতদিন তাঁর পরিবারকে দেওয়া হয়নি প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ। অবশেষে সেই ঘটনার দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর পর ওই শিক্ষকের পরিবারকে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিল দিল্লি হাইকোর্ট। দিল্লি সরকারকে এই নির্দেশ দেওয়ার সময় আদালতের পর্যবেক্ষণ, শিবনাথ প্রসাদের মৃত্যু সরাসরি সরকারি দায়িত্ব পালনের সময়েই হয়েছিল। তাই তাঁর পরিবার ক্ষতিপূরণের অধিকারী।
গত ৪ সেপ্টেম্বর এই রায় ঘোষণা করে বিচারপতি দেবেন্দ্র কুমার উপাধ্যায় ও বিচারপতি তুষার রাও গেদেলার ডিভিশন বেঞ্চ। রায় ঘোষণা করে আদালত জানায়, ২০২০ সালে চালু হওয়া দিল্লি সরকারের বিশেষ নীতিমালায় স্পষ্ট বলা হয়েছিল— কোভিড চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা অবস্থায় কোনও সরকারি কর্মী মারা গেলে তাঁর পরিবারকে মরণোত্তর ১ কোটি টাকা এক্স-গ্রেশিয়া হিসেবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
১৯৯৩ সালে শিক্ষকতা শুরু করা শিবনাথ প্রসাদ মৃত্যুকালে নিথারি এমসিডি প্রাইমারি বয়েজ স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে তাঁকে কোভিড চিকিৎসা সংক্রান্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ওই মাসের ২৪ তারিখে তিনি করোনা সংক্রামিত হন এবং মাত্র চার দিন পর, ২৮ এপ্রিল তাঁর মৃত্যু হয়।
প্রসঙ্গত, ওই প্রধান শিক্ষকের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী ক্ষতিপূরণের আবেদন করলে প্রথমে শিক্ষা দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর ‘কিছু আপত্তি’র কারণ দেখিয়ে আবেদন খারিজ করে দেন। পরে হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চও আবেদন নামঞ্জুর করে দেয়। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পাঠানো একটি সরকারি চিঠি খতিয়ে দেখে নিশ্চিত হয় যে, শিবনাথ প্রসাদ কোভিড ভ্যাকসিনেশনের কাজে নিযুক্ত ছিলেন। সেই প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত জানায়, তাঁর মৃত্যু সরাসরি ওই দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই হয়েছে।
আদালতের পর্যবেক্ষণ, কল্যাণমূলক নীতির মূল লক্ষ্য হল, পরিবারকে সুরাহা দেওয়া। তাই খুঁতখুঁতে মনোভাব বা অতিরিক্ত কড়াকড়ি নয়, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিই প্রশাসনের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।
তাই রায়ে দিল্লি সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আট সপ্তাহের মধ্যে শিবনাথ প্রসাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১ কোটি টাকা দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা দেওয়া না হলে, বার্ষিক ৬ শতাংশ হারে সুদ-সহ সেই অর্থ প্রদান করতে হবে।