মাস ঘুরলেই বিহারে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে বিপাকে পড়লেন আরজেডি নেতা লালু প্রসাদ যাদব এবং তাঁর পরিবার। আইআরসিটিসি দুর্নীতি মামলায় লালু প্রসাদ, স্ত্রী রাবড়ি দেবী এবং ছেলে তেজস্বী যাদবের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের নির্দেশ দিল দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালত। সোমবারই স্পেশাল জজ বিশাল গগনে এই নির্দেশ দিয়েছেন।
এ দিন হুইল চেয়ারে বসে আদালতে পৌঁছন বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী রাবড়ি দেবী এবং ছেলে তেজস্বী যাদব। সোমবার আদালতে হাজির হবেন বলে রবিবারই দিল্লিতে পৌঁছে যান। সূত্রের খবর, এ দিন বিচার প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দেওয়ার আগে আদালত লালু, রাবড়ি ও তেজস্বীর কাছে জানতে চায়, তাঁরা কি অপরাধ শিকার করছেন? তাঁরা এক বাক্যে তা অস্বীকার করেন এবং জানিয়ে দেন, বিচার প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে তাঁরা প্রস্তুত। রাবড়ি দেবী জানান, এই মামলা একেবারেই ভিত্তিহীন।
বিজেপিকে তোপ দেগে তেজস্বী বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা শিকার। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত লড়ব। তিনি জানান, ‘আদালতের রায়কে আমরা সম্মান করি। আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি যে নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে তত এ ধরনের জিনিস ঘটবে। বিহারের মানুষ বুদ্ধিমান। তাঁরা জানে কী ঘটছে। আমরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত লড়ে যাব।‘ আরজেডি সুপ্রিমো লালু প্রসাদের প্রশংসা করে তেজস্বী বলেন, ‘বাবা সবচেয়ে জনপ্রিয় রেলমন্ত্রী ছিলেন। তিনি রেলকে ৯০ হাজার কোটি টাকা মুনাফা এনে দিয়েছিলেন। প্রতিটি বাজেটে তিনি রেলের ভাড়া কমিয়েছেন। হার্ভার্ড এবং আইআইএম-এর ছাত্রছাত্রীরা তাঁর কাছে পড়াশোনা করতে আসতেন। বিহার এবং দেশের মানুষ সত্যটা জানেন।‘
লালু প্রসাদ ও তাঁর স্ত্রী-পুত্রের বিরুদ্ধে রেলের দু’টি হেরিটেজ হোটেল বেসরকারি হাতে তুলে দিয়ে বিপুল টাকা নয়-ছয় করার অভিযোগ উঠেছে। বিচারকের মতে এর ফলে সরকারি কোষাগারে বিশাল অঙ্কের ক্ষতি হয়েছে। লালু, তেজস্বী এবং রাবরি দেবী সকলেই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। রাবড়ি দেবীর দাবি, মামলাটি ‘ভুয়ো’। লালু প্রসাদ যাদব এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রতারণা এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের ধারার চার্জ গঠন করেছে আদালত। পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ধারাও যুক্ত করা হয়েছে।
২০০৪ থেকে ২০০৯ এই সাল পর্যন্ত দেশের রেলমন্ত্রী ছিলেন লালু প্রসাদ যাদব। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সম্পদ বেঁচে অর্থ সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই তালিকায় ছিল ভারতীয় রেল। লালু প্রসাদ রেলমন্ত্রী থাকাকালীন আইআরসিটিসি-র দু’টি অভিজাত হেরিটেজ হোটেল বিএনআর পুরী এবং বিএনআর রাঁচির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সুজাতা হোটেল প্রাইভেট লিমিটেডের হাতে তুলে দেন। যে সংস্থা হোটেল দু’টি কিনেছে তারা পাটনায় প্রায় ৩ একর জমি লালু প্রসাদের নামে লিখে দিয়েছে এমন অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু করে সিবিআই।
২০১৭ সালে লালু প্রসাদ যাদব এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে সিবিআই। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের জন্য যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ রয়েছে বলে দিল্লি কোর্টকে জানিয়েছে সিবিআই। এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন লালুর আইনজীবী। তাঁর দাবি এই টেন্ডারে কোনও দুর্নীতি হয়নি। সঠিক পদ্ধতিতে টেন্ডার পাশ করা হয়।
এ ছাড়া, লালুর পরিবারের বিরুদ্ধে গ্রুপ ডি-র চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে বহু চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে ন্যূনতম দামে জমি কিনে নেওয়ার অভিযোগও ওঠে। ২০২২ সালে ওই মামলায় চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। মোট ১৬ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। সেই মামলাতেও এ বার চার্জগঠন করল দিল্লির আদালত।
বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তেজস্বীকে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী করে বিরোধী শিবির লড়াই করবে এমনটাই ঠিক হয়ে আছে। ইতিমধ্যে নির্বাচনের দিনক্ষণও ঘোষণা করে দিয়েছে কমিশন। নভেম্বরের ৬ ও ১১ তারিখ দু’দফায় ভোট হবে বিহারে। এমন সময় আদালতের এই নির্দেশ তেজস্বীর পক্ষে কতটা সুখবর হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। দিল্লিতে তেজস্বীর সঙ্গে রাহুল গান্ধীর বৈঠক হওয়ার কথা। আদালতের নির্দেশের পর সেই বৈঠকের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় তৈরি হল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।