তামিলনাড়ুর করুরে অভিনেতা বিজয়ের জনসভায় পদপিষ্ট হয়ে মারা গেছেন ৩৯ জন। তার মধ্যে ১৬ জন মহিলা এবং ১০ জন শিশু রয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের বয়স ২ বছর। আইসিউতে ভর্তি ৫১ জন। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্ট্যালিন এদিন আক্ষেপের সুরে বলেন, তামিলনাড়ুর ইতিহাসে এর আগে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এত মানুষের প্রাণ যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থনা করেছেন, আগামী দিনে যেন এই ধরনের ঘটনা না ঘটে।
শনিবার তামিলনাড়ুর করুরে তামিলাগা ভেটরি কাজগাম (টিভিকে) দলের প্রতিষ্ঠাতা তথা অভিনেতা বিজয় একটি জনসভার ডাক দেন। সভার মূল বক্তা ছিলেন তিনি নিজেই। সভা শুরু হওয়ার কথা ছিল দুপুরে। প্রায় ছ’ঘণ্টা দেরিতে বিজয় সভাস্থলে এসে পৌঁছোন বলে অভিযোগ। তারফলে ভিড় মাত্রা ছাড়িয়ে যায় বলে খবর। অনেকে গরমে অসুস্থও হয়ে পড়েন।সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিট নাগাদ পদপিষ্টের ঘটনাটি ঘটে বলে জানা গেছে। তার কিছু ক্ষণ আগেই বক্তৃতা দিতে মঞ্চে উঠেছিলেন বিজয়।
মঞ্চ থেকে ডিএমকে-র প্রাক্তন মন্ত্রী সেন্থিল বালাজীকে একাধিক বাক্যবাণে বিদ্ধ করেন তিনি। ঠিক সেই সময় আচমকা উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। প্রিয় অভিনেতাকে সামনে থেকে দেখতে অনেকে একসঙ্গে মঞ্চের দিকে এগোতে থাকেন। সেই সময় ভিড়ের মাঝে টাল সামলাতে না পেরে কেউ কেউ পড়ে যান। তাঁদের উপর দিয়েই এগোতে থাকেন বাকিরা। ধাক্কাধাক্কিতে একাধিক শিশুও অভিভাবকদের থেকে আলাদা হয়ে যায়। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। জ্ঞানও হারান কেউ কেউ।
পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে মাঝপথে বক্তৃতা থামিয়ে দেন বিজয়। আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। তত ক্ষণে অনেকের মৃত্যু হয়। সংবাদ মাধ্যম অনুসারে, পদপিষ্টের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। বহু মানুষ হাসপাতালে ভরতি। তার মধ্যে কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
মধ্যরাতেই আহতদের সঙ্গে দেখা করতে কারুরের সরকারি হাসপাতালে যান তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। আহতদের কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। স্ট্যালিন জানিয়েছেন, তামিলনাড়ু সরকার মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে ১০ লক্ষ টাকা দেবে। আহতদের পরিবার পিছু দেওয়া হবে এক লক্ষ টাকা। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই অবসরপ্রাপ্ত হাই কোর্টের বিচারপতির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছেন তিনি। বিচারপতি অরুণা জগদীশন ওই কমিটির নেতৃত্ব দেবেন।
স্ট্যালিন এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘তদন্তে সত্য উঠে আসবে। আমি রাজনৈতিক উদ্দেশে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। সত্য প্রকাশ্যে আসার পরেই কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।‘ ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় শোকজ্ঞাপনের কোনও ভাষা নেই। তামিলনাড়ুর ইতিহাসে এত মর্মান্তিক ঘটনা আগে কোনও রাজনৈতিক সভায় হয়নি। এত মানুষের প্রাণ আগে যায়নি। এখনও পর্যন্ত ৩৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আরও ৫১ জন আইসিইউতে। মৃতদের পরিবারের প্রতি আমি সমবেদনা জানাই।‘
পদপিষ্টের ঘটনা নিয়ে বিজয় সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ’আমার হৃদয় বিদীর্ণ। শোকপ্রকাশের ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আমার যে সব ভাই-বোনেদের প্রাণ গিয়েছে তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। যারা আহত হয়েছেন তাঁদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি।‘ প্রত্যাশার থেকে অনেক বেশি ভিড় এবং জনসভায় বিজয়ের দেরি করে আসাকেই পদপিষ্টের ঘটনার জন্য দায়ী করেছে পুলিশ।
তামিলনাড়ু পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ডিজি জি ভেঙ্কটরমন জানান, ‘সভার উদ্যোক্তারা ১০ হাজার লোকের জমায়েতের জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু তার তিন গুণ লোক সভায় যোগ দিয়েছিলেন।’ ওই পুলিশ আধিকারিক একটি সংবাদ সংস্থাকে জানান, ‘এর আগে টিভিকে-র জনসভায় কখনও এত লোক হয়নি। কিন্তু এ বারের ভিড় প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ছিল। ১০ হাজার মানুষের সমাগম হবে, এমনটা ধরে নিয়ে আমাদের কাছে বড় মাঠের জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু প্রায় ২৭ হাজার মানুষ জড়ো হন ওই মাঠে।‘
দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর এক্স হ্যান্ডেলে প্রধানমন্ত্রী লেখেন, ‘তামিলনাড়ুর কারুরে রাজনৈতিক সমাবেশের যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও দুঃখজনক। দুর্ঘটনার জেরে যারা প্রিয়জনদের হারিয়েছেন সেই সকল পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা। ঈশ্বর তাদের এই কঠিন সময় থেকে বেরিয়ে আসার শক্তি দিন। আহত সকলের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও কারুরের পদপিষ্টের ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন। স্ট্যালিনের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পরিস্থিতির মোকাবিলায় কেন্দ্রের তরফে সব রকমের সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি শোকপ্রকাশ করেছেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। ঘটনায় মৃতদের পরিবারের উদ্দেশে সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি আহতদের আরোগ্য কামনা করেছেন তিনি। দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবতীয় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য।