সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক হলেন কেরলের প্রাক্তন মন্ত্রী ও প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ মারিয়াম আলেকজান্ডার বেবি। এই নিয়ে টানা তৃতীয়বার এই পদে বসছেন একজন মালয়ালি। মাদুরাইয়ে অনুষ্ঠিত সিপিআইএম ২৪ তম পার্টি কংগ্রেস থেকে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়। সীতারাম ইয়েচুরির প্রয়াণের পর থেকেই সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের পদটি ফাঁকা ছিল। এতদিন প্রকাশ কারাট কাজ চালাচ্ছিলেন পলিটব্যুরোর সমন্বয়ক হিসাবে। শনিবার ছিল বেবির জন্মদিন। তার পরের দিনই দলের শীর্ষপদ পেলেন তিনি। বেবিকে আগামী তিন বছরের জন্য দায়িত্ব দিল দল। সূত্রের খবর, বেবিকে দু’টি মেয়াদ (ছ’বছর) এই দায়িত্বে রাখার ভাবনা রয়েছে সিপিএমের।
ওয়াকিবহল মহলের মতে, বাংলায় সিপিএম ‘শূন্য’। ত্রিপুরায় শাসক বিজেপির সমীকরণের কারণে প্রধান বিরোধী দলের তকমা রয়েছে। একমাত্র কেরলেই ক্ষমতায় রয়েছে দল। বাংলা এবং কেরলে পরের বছরই ভোট। বাংলার তুলনায় কেরলে যে সিপিএমের ফল ভালো হবে, তা বলাই বাহুল্য। সেই দিকটি মাথায় রেখেই শীর্ষপদে বসানো হয়েছে কেরলের বর্ষীয়ান নেতাকে। আরেকটি সূত্রের দাবি, সীতারমের মৃত্যুর পরে প্রকাশ, বৃন্দারা চেয়েছিলেন বাংলার রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম দায়িত্ব নিন দলের। কিন্তু সেলিম রাজ্য ছেড়ে দিল্লি যেতে রাজি হননি। বিকল্প মুখ না থাকায় একটা সময় বিজয়নের বিরোধী শিবিরের লোক বলে পরিচিত ছিলেন বেবিকেই সাধারণ সম্পাদক হিসাবে বেছে নিল দল।
রাজনৈতিক মহলের মতে, সিপিএমে ক্রমেই প্রভাব বাড়ছে দক্ষিণের। সীতারাম ইয়েচুরির পর কেরলের আলেকজান্ডার বেবি সাধারণ সম্পাদক হওয়ার বিষয়টি সেই দিকেই ইঙ্গিত দেয়। গত কয়েক দশক ধরেই সিপিএম শীর্ষ পদে রয়েছেন দক্ষিণ ভারতের নেতারা। কেরলের ইএমএস নাম্বুদিরিপাদ এবং অন্ধ্র প্রদেশের পি সুন্দরাইয়ার পর সিপিএমের শীর্ষপদে ছিলেন পাঞ্জাবের হরকিষেণ সিংহ সুরজিৎ। এরপর কারাট, সীতারাম হয়ে দায়িত্ব পেলেন মারিয়াম আলেকজান্ডার বেবি।
নতুন সাধারণ সম্পাদকের নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে পুনরায় বামেদের মধ্যে কেরল-বাংলার বিভাজন স্পষ্ট হয়েছে বলে মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। দক্ষিণী পলিটব্যুরো, এমনকি দলের অন্য সদস্যরাও এম এ বেবিকে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে এগিয়ে দিলেও, তাঁর বিরোধিতা করতে দেখা যায় বাংলার বামেদের নেতাদের। সূত্রের খবর, এমএ বেবিকে এই পদে আনার বিরোধিতা করেছেন ১৬ সদস্যের পলিটব্যুরো কমিটির পাঁচ জন। সেই তালিকায় রয়েছেন সূর্যকান্ত মিশ্র, নীলোৎপল বসু, মহম্মদ সেলিম, রামচন্দ্র ডোম এবং অশোক ধাওয়ালে।
১৯৫৪ সালের ৫ এপ্রিল কেরলের কোল্লাম জেলার প্রক্কুলমে মারিয়াম আলেকজান্ডার বেবির জন্ম হয়। ছাত্রজীবনে কেরল স্টুডেন্টস ফেডারেশনের মাধ্যমে (পরে নাম হয় এসএফআই) মারিয়াম আলেকজান্ডার বেবি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। পরে তিনি যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই-এর সঙ্গে যুক্ত হন। ৩২ বছর বয়সে রাজ্যসভার সদস্য হন এমএ বেবি। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত তিনি রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন। ২০০৬ সালে কেরল থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন বেবি। ভিএস অচ্যুতানন্দন মন্ত্রিসভার শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও আলেকজান্ডার বেবি কুন্দারা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কোল্লাম কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জিততে পারেননি তিনি। কংগ্রেস সমর্থিত আরএসপি প্রার্থী এন কে প্রেমচন্দ্রনের কাছে ৩৭,৬৪৯ ভোটে পরাজিত হন বেবি।
সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসে পলিটব্যুরোর নয়া সদস্যদের নামও ঘোষিত হয়। বয়সের কারণে বাদ পড়েন অনেক শীর্ষ নেতাই। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে রেখে দেওয়া হয়েছে। বাংলা থেকে পলিটব্যুরোতে জায়গা পেলেন শ্রীদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ত্রিপুরার রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী পলিটব্যুরোর সদস্য হয়েছেন। অনেকেই বলছেন, সিপিএমে প্রজন্ম বদল ঘটে গেল মাদুরাই পার্টি কংগ্রেসে। যদিও পলিটব্যুরোর আমন্ত্রিত সদস্য হিসাবে রেখে দেওয়া হল প্রকাশ কারাট, মানিক সরকার ও বৃন্দা কারাটকে।
এদিকে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্যদের অন্তর্ভুক্তির জন্য ভোটাভুটি হয়েছে। বাংলা থেকে নতুন করে কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে চমকপ্রদ নাম মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। মীনাক্ষী ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পেলেন গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা ঘোষ, হুগলির জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ, পূর্ব বর্ধমানের জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন, দার্জিলিংয়ের জেলা সম্পাদক সমন পাঠক। বয়সের কারণে এবারে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়লেন সূর্যকান্ত মিশ্র, রবীন দেব ও রেখা গোস্বামী। সব মিলিয়ে ৮৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বাংলার সদস্য বেড়ে দাঁড়াল ১৫।