বিএলওদের নিরাপত্তার দেওয়া কেন্দ্র ও কমিশনের দায়িত্ব: সুপ্রিম কোর্ট

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

লোকসভা থেকে সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার সর্বত্রই বিএলওদের সুরক্ষার বিষয়টি ছিল আলোচ্য। বিশেষ নিবিড় সংশোধন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চলছে মামলা। মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানিতে গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের। বিএলও-দের নিরাপত্তা ইস্যুতে কেন্দ্র এবং নির্বাচন কমিশনকেও দায় নিতে বলল শীর্ষ আদালত। এ দিন আদালতে বিএলও-দের হুমকির বিষয়টি ওঠায় নির্বাচন কমিশনকেও সতর্ক করেছে প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। কমিশনকে অরাজকতা এড়িয়ে পরিস্থিতি কড়া হাতে মোকাবিলা করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বাংলার পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ ওঠায় নির্দিষ্ট ভাবে সমস্যা কোথায় তা জানতে চান বিচারপতিরা।

অন্যদিকে সংসদে বিএলও-দের উপর কাজের চাপের অভিযোগে সরব হন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনিও বলেন, ‘এসআইআর কাজ শুরু হওয়ার পরে বিএলও-দের উপর অমানবিক কাজের চাপ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গে ২০ জন আত্মহত্যা করেছেন। সুইসাইড নোটও রয়েছে। পাঁচ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ১৯ জন মারা গিয়েছেন। তিন জন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। এর জন্য দায়ী কে! নির্বাচন কমিশন?’ তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদবও বিএলওদের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে সরব হন।

কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘এটি শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি নয়। উত্তরপ্রদেশে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেটি বিজেপি শাসিত রাজ্য। মধ্যপ্রদেশে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটিও বিজেপি শাসিত রাজ্য। গুজরাতে ৬ জন, রাজস্থানে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। কেউ তাঁদের কাছে গিয়েছেন? বিজেপির কোনও সাংসদ, মুখ্যমন্ত্রী গিয়েছেন খোঁজ নিতে যে কেন মৃত্যু হয়েছে? আমরা গিয়েছিলাম। সিপিএম শাসিত কেরলে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। ডিএমকে শাসিত তামিলনাড়ুতে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।‘


এদিন সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চেও বিএলওদের নিরাপত্তার বিষয়টির উপর জোর দেওযা হয়। শুধু রাজ্য নয়, বিএলও-দের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখার দায়িত্ব কেন্দ্র এবং কমিশনের উপরও বর্তায় বলে আদালতের পর্যবেক্ষণ। তবে রাজ্যকে সহযোগিতা করার কথা আদালতে বলা হয়েছে। সহযোগিতা না করলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। বিএলও-দের উপর অতিরিক্ত কাজের চাপ নিয়ে এদিন শীর্ষ আদালত প্রয়োজনে বিএলও-র সংখ্যা বৃদ্ধি করার কথা বলা হয়। তবে বিএলও-দের উপর অতিরিক্ত চাপ যেন না আসে, সেদিকটাও কমিশনকে খতিয়ে দেখতে বলা হয়।

এদিন মামলার শুনানিতে বিএলও-দের হুমকি দেওয়ার বিষয়টিও সামনে আসে। আইনজীবী দাবি করেন, পশ্চিমবঙ্গে বিএলও-দের ভয় দেখানো হচ্ছে। এসআইআরের কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কত জনকে হুমকি দেওয়া হয়েছে তা জানতে চায় আদালত। কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বিএলও-দের হুমকি দেওয়ার মাত্র একটি অভিযোগ এসেছে। এখনও পর্যন্ত একটিই এফআইআর হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই নিরাপত্তা ইস্যুতে কমিশন ও কেন্দ্রকেও দায় নিতে বলেছে আদালত।

অতিরিক্ত নিরাপত্তা চেয়ে রাজ্য সরকারকে অনুরোধ জানানোর কথা বলেছেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী৷ রাজ্য সরকার সেই অনুরোধের পরেও কোনও ব্যবস্থা না নিলে আদালতে আবেদন করার কথা বলেন তিনি। বিএলওদের কাজের প্রকৃতি মনে করিয়ে আদালত তাঁদের নিরাপত্তার উপর জোর দেওয়া হয়। বিচারপতিদের মতে, বিএলও-রা যেহেতু রাস্তায় নেমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করছেন। তাই তাঁদের উপর রাজনৈতিক ভাবে যাতে কোনও চাপ সৃষ্টি না করা হয় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে কমিশনকে দেখার কথা বলা হয়েছে। শীর্ষ আদালত নির্বাচন কমিশনকে রাজ্য সরকারগুলির সহযোগিতার অভাবের বিষয়টিও কড়া ভাবে দেখার কথা বলেছে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘অবশ্যই কমিশনকে পদক্ষেপ করতে হবে। না হলে অরাজকতা তৈরি হতে পারে। এর আগে আমরা বিএলও নিয়ে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম, তা সব রাজ্যের জন্যই প্রযোজ্য।’ দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যায় পড়লে বিএলও-রা মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক  এবং জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরে অভিযোগ জানাতে পারবেন। তাঁদেরকে নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ওই বিষয়ে রাজ্যের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত পদক্ষেপ করেন।

পশ্চিমবঙ্গে বিএলও-দের নিয়ে একের পর এক ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে উপযুক্ত নিরাপত্তার দাবি জানান আইজীবীরা। তা শুনে প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্তর পর্যবেক্ষণ,‘আমরা নোটিস জারি করে আপনাদের বক্তব্য জানতে চাইছি৷ আপনারা আমাদের খোলাখুলি জানান, কোন কোন রাজ্যে আপনাদের সমস্যা হচ্ছে? বিএলও-রা যদি নিরাপত্তা না পান, তারা যদি স্বাধীন ভাবে কাজ করতে না পারেন, তাহলে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে বিবেচিত হবে৷’