কে কবিতাকে তিহার জেলের ভিতর থেকেই গ্রেফতার করল সিবিআই

দিল্লি, ১১ এপ্রিল – তেলেঙ্গানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের কন্যা কে কবিতা দিন কয়েক আগেই তিহার জেলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। বৃহস্পতিবার ঈদের দিন কে কবিতাকে তিহার জেলের ভিতর থেকেই সিবিআই গ্রেফতার করেছে বলে খবর। সূত্রের খবর, দিল্লির আবগারি মামলার সঙ্গে যুক্ত একটি আর্থিক তছরুপের অভিযোগে কবিতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।  ওই মামলাতেই আগে ইডির হাতে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে তিহার জেলে ছিলেন বিআরএস নেত্রী। তবে বিএআরএস নেত্রীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন বিরোধীরা।  বিরোধীদের অভিযোগ, লোকসভা ভোটের মুখে একের পর এক রাজ্যের বিরোধী নেতাদের হেনস্থা করা হচ্ছে।  

গত ১৫ মার্চ হায়দরাবাদের বানজারা হিলস এলাকার বাড়ি থেকে তেলেঙ্গানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের কন্যা কবিতাকে এই একই মামলায় গ্রেফতার করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। আদালতের অনুমতিতে সিবিআই তাঁকে তিহার জেলের ভিতরেই জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছিল। সহ অভিযুক্তের ফোন থেকে তাঁর সঙ্গে হোয়াটস অ্যাপ চ্যাট নিয়ে কবিতাকে প্রশ্ন করা হয়। বর্তমানে বাতিল দিল্লির আবগারি নীতিতে আম আদমি পার্টিকে `খুশি` করতে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে কে কবিতার বিরুদ্ধে। এজন্য একটি জমি লেনদেনের নথি পাওয়া গিয়েছে এক অভিযুক্তের কাছে। প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার দিল্লির বিশেষ আদালত কে কবিতার আরও ১৪ দিন হেফাজতের মেয়াদ বৃদ্ধি করে। সোমবার অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যায়।

গত মঙ্গলবারেই কবিতা আদালতকে লেখা এক চিঠিতে বলেন, আমার ভাবমূর্তি, মানসম্মানকে নিশানা করা হয়েছে। আমার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারকে প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি আমার বিরুদ্ধে যে তদন্ত চালাচ্ছে, তা পুরোপুরি সংবাদমাধ্যমের বিচারের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।


আদালতকে লেখা এক চিঠিতে কবিতার বক্তব্য, যা চলছে সেটি একটি মিডিয়া ট্রায়াল। এই বিচারে তাঁর সুনাম ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। তাঁর যাবতীয় গোপনীয়তাকে প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। তাঁর লেখা চিঠিটি এজলাসে পড়ে শোনান কবিতার আইনজীবী। কেসিআর কন্যার অভিযোগ, আমি শিকার হয়েছি। আমার ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক সুনাম ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। আমার মোবাইল ফোন সমস্ত টেলিভিশন চ্যানেলে দেখানো হয়েছে। সেখানে আমার গোপনীয়তাকে লোকচক্ষুর সামনে নগ্ন করে তুলে ধরা হয়েছে।

তিনি আরও লিখেছেন, সংস্থাগুলির সঙ্গে বরাবর আমি সহযোগিতা করে এসেছি। আমার সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য দিয়েছি। ইডির দাবি মিথ্যা প্রমাণ করে আমার সব মোবাইল ফোন ওদের হাতে তুলে দিয়েছি। একটি ফোনও নষ্ট করা হয়নি। এর আগে কে কবিতাকে আদালত জানিয়ে দেয়, ব্যক্তিগতভাবে তিনি এজলাসে কিছু বলতে পারেন না। তাঁর যা বলার আছে, তা যেন তিনি লিখিত আকারে বলেন।

চিঠিতে কবিতা বিজেপিকে আক্রমণ করেন। বলেন, ওরা কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির অপব্যবহার করছে। ইডি-সিবিআইয়ের মামলাগুলির ৯৫ শতাংশই বিরোধী দলের নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে। আর যখন কেউ বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন, তখনই সেই মামলা শেষে হয়ে যাচ্ছে। তাঁর আরও অভিযোগ, সংসদে দাঁড়িয়ে বিজেপি নেতারা হুমকি দিয়ে বলেন, চুপ করে থাকতে, নইলে বাড়িতে ইডি পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আর আমার দল যখন রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল, তখন কেন আমায় কেন গ্রেফতার করা হল না। অথচ এখন বিরোধী বলেই কি এই ধরপাকড় ?

হেফাজতের মেয়াদ বৃদ্ধির ঘোষণার পর এজলাস ছাড়ার সময় কবিতা সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, এটা রাজনৈতিক মামলা। বিরোধীদের নিশানা করতেই এ ধরনের মামলা হচ্ছে। নিছক মুখের কথার উপর ভিত্তি করেই এই মামলা, যা ভবিষ্যতে দাঁড়াবে না।

শুধু কবিতায় নন, আবগারি মামলায় কিছুদিন আগে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করেছে ইডি। কিন্তু তিনি মুখ্যমত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেননি। বর্তমানে তাঁরও ঠিকানা তিহার জেল।