দুই বিচারপতির সংঘাতে ‘দুঃখিত এবং লজ্জিত’ কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম

দিল্লি, ৩০ জানুয়ারি – কলকাতা হাই কোর্টের দুই বিচারপতির নজিরবিহীন সংঘাত নিয়ে এ বার মুখ খুললেন হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। তিনি বলেন, এই ঘটনায় তিনি লজ্জিত। দ্রুত সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে এজলাস ছেড়ে উঠে যাওয়ার আগে এই মন্তব্য করেন বিচারপতি। সেই সময় আদালতের সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ ছিল। হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি সৌমেন সেনের পারস্পরিক সংঘাত প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতির জন্য আমি দুঃখিত এবং লজ্জিত। আইনের এই মন্দির থেকে এটা আশা করা যায় না।’’

দুই বিচারপতির সংঘাত প্রকাশ্যে আসার পরই  স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। মেডিক্যালে ভর্তি সংক্রান্ত মামলা হাই কোর্ট থেকে আপাতত সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই মামলা শীর্ষ আদালত নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছে। দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় জানিয়েছেন, কলকাতা হাই কোর্টে সিঙ্গল এবং ডিভিশন বেঞ্চের মধ্যে যা হচ্ছে, তা ঠিক নয় । কিন্তু এ প্রসঙ্গে তিনি কোনও মন্তব্যও করতে চান না। কারণ তা হলে হাই কোর্টের গৌরব ক্ষুণ্ন হতে পারে।

এদিন প্রথম অর্ধের শুনানি শেষে এজলাস ছাড়ার সময় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম বলেন, ‘দেশের অন্যতম বড় হাইকোর্টে এই ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত।’ তিনি কোনও বিচারপতির নাম উল্লেখ না করেই বলেন, ‘দেশের অন্যতম বিচারালয়ে এই ধরনের ঘটনার দীর্ঘ প্রভাব পড়ে। আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে এই ঘটনায় লজ্জিত এবং দুঃখিত।’


মেডিক্যালে ভর্তি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।  বিচারপতি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ সেই নির্দেশ খারিজ করে দিয়েছিল। এর পরেই ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তোলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। ‘ত্রুটি’ উল্লেখ করে ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশই তিনি খারিজ করে দেন এবং সিবিআইকে তদন্ত চালিয়ে যেতে বলেন।

উল্লেখ্য, কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির মধ্যে সংঘাতের অবসান ঘটাতে ইতিমধ্যেই নজিরবিহীন পদক্ষেপ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট এই সংক্রান্ত শুনানির জন্য বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে। শনিবার ছুটির দিনে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে বসে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ। ওই দিন হাই কোর্টে মেডিক্যাল মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ দিয়েছিল আদালত। তারপর সোমবার সুপ্রিম কোর্ট জানায়, তারা এই মামলা নিজেদের হাতে নিচ্ছে। মামলার সব পক্ষকে হলফনামা জমা দিতে বলা হয়েছে। তিন সপ্তাহ পরে এই মামলার শুনানি হবে শীর্ষ আদালতে।

সোমবার শুনানি চলাকালীন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সিঙ্গল ও ডিভিশন বেঞ্চের মধ্যে যে নজিরবিহীন সংঘাত তৈরি হয়েছে তা মোটেও ভালোভাবে দেখছে না সুপ্রিম কোর্ট। তবে হাইকোর্টের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার মতো কোনও মন্তব্য করব না।