ভারতে ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস খোলার ঘোষণা করলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার। বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী। ব্রিটেনের পাঁচটি প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের প্রধান শহরগুলিতে ক্যাম্পাস নির্মাণের কথা জানিয়েছে।
সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই একটি ক্যাম্পাস চালু করেছে। এছাড়াও ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয় মুম্বইতে একটি নতুন এন্টারপ্রাইজ ক্যাম্পাস খোলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন পেয়েছে। গুরুগ্রামের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বেঙ্গালুরুতে লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস খোলা হবে। এছাড়া মুম্বইতে ইয়র্ক , অ্যাবারডিন এবং ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস খোলার কথা।
দুই দেশের মধ্যে সামরিক প্রশিক্ষণের একটি চুক্তি সই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ‘ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা আরও জোরদার হয়েছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে কো-প্রোডাকশনের কথা ভাবা হচ্ছে।’ নতুন এই চুক্তির অধীনে ভারতীয় বিমান বাহিনীর এয়ার ট্রেনাররা ব্রিটেনের রয়্যাল এয়ার ফোর্সের সঙ্গে একযোগে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করবেন।
বুধবার সকালে মুম্বই পৌঁছন কিয়ের স্টার্মার। তাঁকে স্বাগত জানান মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ, উপমুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে , অজিত পাওয়ার এবং রাজ্যের রাজ্যপাল আচার্য। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ভারতে আসার পর প্রধানমন্ত্রী মোদী এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘ব্রিটেনের সর্ববৃহৎ বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রথম ঐতিহাসিক ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টার্মারকে স্বাগত জানাই। শক্তিশালী ও পারস্পরিক উন্নত ভবিষ্যৎ রচনার জন্য আগামিকাল আমাদের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছি।’
আজ, বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বৈঠকে বসেন। এদিন দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাণিজ্যচুক্তি ছাড়াও দু’দেশের অর্থনীতি এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের উন্নতি সংক্রান্ত একাধিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে খবর। বৈঠকের পর একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ভারত এবং ব্রিটেন দীর্ঘ দিনের বন্ধু। দু’দেশেই গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং আইনের শাসন রয়েছে। ভারত এবং ব্রিটেন একে অপরের উন্নতি এবং বিভিন্নস্তরে অগ্রগতির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ সম্প্রতি আহমেদাবাদে ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে বৈঠকে শোকপ্রকাশ করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে গাজা শান্তিচুক্তিরও প্রশংসা করেন দুই রাষ্ট্রনেতা।
গত বছরের জুনে ঋষি সুনককে পরাজিত করে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর পদে বসেন কিয়ের স্টার্মার। প্রায় ১৪ বছর পর ব্রিটেনের ক্ষমতায় ফেরে লেবার পার্টি। ব্রিটেনের ৬৫০ আসনের হাউস অফ কমন্সে ৪১২ আসনে জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে লেবার পার্টি। ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর ব্রিটেনের নয়া প্রধানমন্ত্রীকে ফোনে অভিনন্দন জানান মোদী। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতিতে সহমত প্রকাশ করেন দুই দেশের রাষ্ট্রনায়ক।
গত জুলাই মাসেই দুই দেশের মধ্যে সিইটিএ স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ব্রিটেনে ভারতের রপ্তানির ৯৯ শতাংশ পণ্য করমুক্ত করার জনয গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হল সিইটিএ। বস্ত্র, চামড়া, সামুদ্রিক পণ্য, রত্ন, অলংকার, খেলনা, ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, রাসায়নিক এবং অটো যন্ত্রাংশের মতো পণ্য রয়েছে এই তালিকায়। এ দিনের বৈঠকেও দুই দেশের আর্থিক সমন্বয় ত্বরান্বিত করার ব্যাপারে আলোচনা হয় বলে জানিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।
উল্লেখ্য, চলতি বছর জুলাই মাসেই বিট্রেন সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ব্রিট্রেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। সেই সফরেই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সই হয়। সেই সফরেই ভারতে আসার জন্য স্টার্মারকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মোদী।
চলতি বছরের জুলাইয়ে ভারত-ব্রিটেনের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হয়। চুক্তির পর এই প্রথম বৈঠক করলেন দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। ফলে মোদী এবং স্টার্মারের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে রয়েছে দুই দেশেরই কূটনৈতিক মহল।