আমেরিকার একতরফা শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে এবার কৌশলগত সহযোগিতার পথে হাঁটছে ভারত ও ব্রাজিল। বৃহস্পতিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার মধ্যে প্রায় এক ঘণ্টা দীর্ঘ ফোনালাপ হয়। আলোচনার মূল বিষয় ছিল আমেরিকার অতিরিক্ত শুল্ক চাপানোর জেরে উদ্ভূত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংকট এবং তার মোকাবিলায় যৌথ পদক্ষেপ।
আমেরিকা ইতিমধ্যেই ভারত ও ব্রাজিলের উপরে যথাক্রমে ২৫ ও ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক চাপিয়েছে। এর পাশাপাশি রাশিয়া থেকে তেল আমদানির কারণে ভারতের উপরে আরও ২৫ শতাংশ জরিমানা স্বরূপ শুল্ক চাপায় ওয়াশিংটন। এই প্রেক্ষিতেই দুই দেশের নেতাদের মধ্যে এই উচ্চপর্যায়ের আলোচনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
ফোনালাপের পরে এক্স-এ মোদী জানান, ব্রিকস সম্মেলনের পরে লুলার সঙ্গে তাঁর এটাই প্রথম বিশদ আলোচনা। তিনি লেখেন, ‘জ্বালানি, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা – এই সব ক্ষেত্রেই ভারত ও ব্রাজিল কৌশলগত সহযোগিতায় এগিয়ে চলেছে। এর ফলে দক্ষিণ গোলার্ধের অন্যান্য দেশও উপকৃত হবে।’ প্রধানমন্ত্রী জানান, ব্রাজিল থেকেই প্রথম ফোন এসেছিল আলোচনার জন্য।
অন্যদিকে, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টও সমাজমাধ্যমে জানান, ‘একতরফা শুল্ক আরোপ’-এর পরে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁরা বিশদ আলোচনা করেছেন। তাঁর মতে, ভারত ও ব্রাজিল দুই দেশই ক্ষতিগ্রস্ত এবং এই পরিস্থিতিতে ‘বৃহত্তর সংহতি’ গড়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তিনি জানান, আগামী বছরের শুরুতেই ব্রাজিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট, একাধিক মন্ত্রী ও ব্যবসায়ীর দল ভারতে আসবেন। এই সফরের লক্ষ্য উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির রূপরেখা স্থির করা।
চাষবাস থেকে খনিজ, জ্বালানি, স্বাস্থ্য ও ডিজিটাল প্রযুক্তি – বহু ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন লুলা। তাঁর আরও দাবি, ২০৩০ সালের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ চলবে।
উল্লেখ্য, আমেরিকার শুল্ক আরোপের পরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার রাস্তায় হাঁটবেন না বলে সাফ জানিয়েছিলেন লুলা। বরং, তিনি স্পষ্ট বলেন, ভারতের সঙ্গেই আলোচনা হবে। সেইমতোই ফোন এল দিল্লিতে, মোদী-লুলার আলোচনা হল পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে। ভারতের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, আমেরিকার এই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ ‘অযৌক্তিক’ এবং তা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতির পরিপন্থী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আলোচনা শুধু ভারত ও ব্রাজিলের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কই নয়, গোটা বিশ্বে দুই দেশকে এক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে তুলে ধরতে পারে। পাশাপাশি, ট্রাম্প প্রশাসনের চাপের মুখে দুটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির এই সংহতি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে।