যোগী রাজ্যে বিএলও-র মৃত্যু, এসআইআর-কে দায়ী পরিবারের

প্রতীকী চিত্র

এবার যোগী রাজ্যে বুথ লেভেল অফিসার বা বিএলও-র মৃত্যুর অভিযোগ। ডবল ইঞ্জিন সরকারের রাজ্য গুজরাতের পর এই তালিকায় এবার নাম লেখালো উত্তরপ্রদেশও। রাজধানী শহর লখনউয়ে বিশেষ নিবিড় সংশোধনের কাজের চাপে বিএলও-র মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বছর ৫০-এর বিজয় কুমার বর্মা শিক্ষামিত্র হিসেবে কাজ করতেন। সেই সঙ্গে বিএলও-র দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। গত সপ্তাহে ব্রেন হেমারেজে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার রাতে এক বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান।

ইউপি প্রাথমিক শিক্ষামিত্র সংঘের দাবি, ৪ ডিসেম্বর এসআইআর-এর শেষ করার দিন। তার মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য ঊর্ধ্বতন আধিকারিকরা লাগাতার চাপ দিচ্ছেন। যে কোনও সময়ে তাঁরা ফোন করছেন। এমনকি ব্যর্থ হলে এফআইআর দায়ের করার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। এসআইআর-এর চাপে মানসিকভাবে তিনি অস্থির হয়ে পড়েছিলেন বলে দাবি পরিবারের সদস্যদের। তবে লখনউ জেলা প্রশাসন অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিশাখ জি জানিয়েছেন, ১৪ নভেম্বর বর্মার অসুস্থতার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে অন্য কর্মীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। বিজয় কুমার বর্মার মৃত্যু ব্রেন হেমারেজেই হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ম্যাজিস্ট্রেট।

বিজয় কুমার বর্মার স্ত্রী এবং এক ছেলে আছে। ছেলে হর্ষিতের বয়স ২০ বছর, বিটেক পড়ছেন। ছেলে জানিয়েছেন, তাঁর বাবা বহুদিন ধরেই দুশ্চিন্তায় ছিলেন। কাজের বাড়তি চাপ, এসআইআর-এর নথি তৈরি এবং সময়সীমা মেনে শেষ করার চাপ সব মিলিয়ে তিনি অবসাদে ভুগছিলেন। ১৪ নভেম্বর গভীর রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাবার চিকিৎসার খরচ মেটাতে পরিবারকে ধার করতে হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।


সংগঠনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সুশীল কুমার জানিয়েছেন, ‘গ্রামীণ এলাকায় বহু মানুষ অশিক্ষিত বা দিনের পর দিন মাঠে কাজ করেন, ফলে এসআইআর নথি তৈরি করাই কঠিন। তার উপর অতিরিক্ত চাপ দেওয়ায় পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।’ তাঁর দাবি, ‘পরিবার জানিয়েছে, বর্মা এতটাই মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন যে আচমকাই ভেঙে পড়েন। আমরা বলছি, এই অতিরিক্ত চাপ আর দেওয়া চলবে না।’

সংগঠন আরও দাবি করেছে, নির্বাচন সম্পর্কিত সরকারি দায়িত্ব পালনকালে বর্মার এই মৃত্যু ‘মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি ডিউরিং ইলেকশন ওয়ার্ক’-এর আওতায় পড়ে। তাই পরিবারের জন্য আর্থিক সাহায্য ও ক্ষতিপূরণ দাবি করে শনিবারই স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। লখনউ প্রশাসন যদিও বলছে, কোনও অতিরিক্ত চাপ দেওয়া হয়নি। অসুস্থতার খবর পাওয়ার পরই তাঁকে দায়িত্বমুক্ত করা হয়েছিল।

এসআইআর ঘোষণার পর থেকেই দেশের একাধিক রাজ্য থেকে একের পর এক মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে এসেছে। বাংলায় এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে তিনজন বুথ লেভেল অফিসারের। গত শনিবার নদিয়ার কৃষ্ণনগরে নিজের বাড়ি থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে বিএলও রিঙ্কু তরফদারের দেহ। পুলিশ একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে। চিঠিতে কমিশনকে দায়ী করেছেন বিএলও রিঙ্কু।

এর আগে পূর্ব বর্ধমানে ব্রেন স্ট্রোক হয়ে মারা যান অঙ্গনওয়ারি কর্মী তথা বিএলও নমিতা হাঁসদা। এনুমারেশন ফর্ম বিলি করার সময় আচমকা ব্রেন স্ট্রোক হয়ে মারা যান বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর পরিবার। কিছুদিন আগে মৃত্যু হয়েছে জলপাইগুড়ির অন্য আর এক বিএলও-র। তিনিও অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী ছিলেন। মৃত বিএলও–র নাম শান্তিমুনি ওঁরাও। বাড়ির কাছে একটি গাছ থেকে তাঁর ঝুলন্ত অবস্থায় দেহ উদ্ধার হয়। কাজের চাপেই আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পরিবারের।

শনিবার গুজরাত এবং মধ্যপ্রদেশেও বিএলও-র মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। গুজরাতের গিরের সরকারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন অরবিন্দ বাধের। স্ত্রীকে সুইসাইড নোট লিখে তিনি আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ। এসআইআর-এর বিপুল চাপকেই সুইসাইড নোটে দায়ী করেছেন তিনি। অন্যদিকে খেড়া জেলায় হৃদরোগে আক্রান্ত মারা গিয়েছেন সরকারি স্কুলের প্রিন্সিপাল রমেশভাই পারমার। তাঁরও পরিবারের অভিযোগ, এসআইআর-এর কাজ নিয়ে প্রবল চাপের মুখে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। ‌ঘুমের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান রমেশভাই।

মধ্যপ্রদেশের রাইসেন এবং দামোহ জেলায়ও একই ঘটনা ঘটেছে বলে খবর। রমাকান্ত পাণ্ডে এবং সীতারাম গণ্ড নামে দুই বিএলও-র মৃত্যু ঘিরে শোরগোল পড়ে যায়। দুইজনেই পেশায় স্কুল শিক্ষক ছিলেন। সেই সঙ্গে বুথ লেভেল অফিসারের দায়িত্ব পালন করছিলেন। এসআইআর-এর কাজের চাপেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এসআইআর স্থগিত করার আবেদন জানিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখেছিলেন। যার উত্তর এখনও দেয়নি কমিশন। শনিবার বাংলার এক বিএলও-র মৃত্যুতে মুখ্যমন্ত্রী এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে ক্ষোভ উগড়ে দেন। আর কত মৃত্যুতে কমিশনের হুঁশ ফিরবে বলেও মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী।

অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু এবং কেরল রাজ্য এসআইআরের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছে। উত্তরপ্রদেশের বারাবাঁকির কংগ্রেস সাংসদ তনুজ পুনিয়াও এসআইআর স্থগিতের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন। কমিশনের বক্তব্য জানতে চেয়ে নোটিস জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট। মামলার পরবর্তী শুনানি সম্ভবত ২৬ নভেম্বর।