কালো টাকার হিসাব নিয়ে সংসদে মালা রায়ের প্রশ্নের জবাবে তুমুল বিতর্ক

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

মীনাক্ষী ভট্টাচার্য, দিল্লি—

দীর্ঘ দশ বছরের প্রতীক্ষার পরেও কালো টাকা উদ্ধারের বাস্তব ছবি কতটা বদলেছে? সেই প্রশ্নে সোমবার শীতকালীন অধিবেশনে বিতর্কের ঝড় উঠল। তৃণমূল সাংসদ মালা রায়ের প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় অর্থ দপ্তরের দেওয়া তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই এই বিতর্ক আরও নতুন মাত্রা পেয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হঠাৎ করেই ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের ঘোষণা করেছিলেন। তখন দাবি করা হয়েছিল, এই সিদ্ধান্তেই দেশে থাকা জাল নোট ও কালো টাকার দৌরাত্ম্য শেষ হয়ে যাবে। গরিব-দুস্থ মানুষ সেই সময় ব্যাংকের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকারের বক্তব্য ছিল, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এই ‘কঠোর পদক্ষেপ’ জরুরি।


দশ বছর পেরিয়ে আজ সেই প্রতিশ্রুতির ফল কতটা মিলেছে, সেই জবাবই জানতে চান মালা রায়। তাঁর সরাসরি প্রশ্ন ছিল, ‘গত দশ বছরে কেন্দ্র সরকার বিদেশ থেকে কত কালো টাকা ফিরিয়ে আনতে পেরেছে? আর দেশের বাইরে কত পরিমাণ কালো টাকা চলে গিয়েছে?’

এই প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় অর্থ দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘২০১৫ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে বিদেশে থাকা অপ্রকাশিত সম্পত্তির খতিয়ান প্রকাশের যে বিশেষ প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছিল, তার আওতায় মোট ৪ হাজার ১৬৪ কোটি টাকার অপ্রকাশিত সম্পত্তির হদিশ পাওয়া যায়। এর মধ্যে থেকে কর ও জরিমানা বাবদ সংগ্রহ করা গিয়েছে ২ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা।’

অর্থ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিদেশে থাকা সম্পদের ক্ষেত্রে ‘কালো টাকা’ বলে কোনও আলাদা সংজ্ঞা নেই। আইন অনুযায়ী, ‘অপ্রকাশিত বিদেশি সম্পত্তি’ হিসেবেই তা বিবেচিত হয়। সেই নিয়মেই গত এক দশকে মোট ১ হাজার ৮৭টি অপ্রকাশিত বিদেশি সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। এসবের ভিত্তিতে দাবি করা হয়েছে, ৪০ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা কর ও জরিমানা দাবি করা হয়েছে। কিন্তু উদ্ধার করা গিয়েছে মাত্র ৩৩৯ কোটি টাকা।

তবে সাংসদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, এই দশ বছরে ঠিক কত কালো টাকা দেশের বাইরে গিয়েছে? এই প্রশ্নের কোনও উত্তরই দেননি প্রতিমন্ত্রী। তাঁর নীরবতা নিয়েই সংসদে নতুন করে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে।

বিরোধী শিবিরের দাবি, ‘মোদী সরকারের সবচেয়ে বড় প্রতিশ্রুতির ফসল বলতে গেলে হাতে এসেছে সামান্য কিছু অঙ্ক, বাকি বিশাল অঙ্কের দাবির হিসাবই নেই।’ ক্ষমতাসীন শিবির অবশ্য বলছে, ‘কালো টাকা দমনে আইন কঠোর হয়েছে। তথ্য উন্মোচনের প্রক্রিয়াও দ্রুততর করা হয়েছে।’

তবে আজকের তথ্য সংসদে প্রকাশিত হওয়ার পর সাধারণ মানুষ ও বিশেষজ্ঞ মহল— দু’দিকেই নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে— দশ বছর আগে নোট বাতিলের যে যুক্তি দেখানো হয়েছিল, সত্যিই কি তা পূরণ হয়েছে?