বিহারে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ শেষ, বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট পড়ল ৬০.১৩ শতাংশ

ছবি: এএনআই

পাটনা,৬ নভেম্বর— বৃহস্পতিবার বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়, আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টায়। এই সময়সীমার পরেও যাঁরা ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাঁদেরই শুধু পরে ভোট দিতে দেওয়া হয়েছে। তবে বেশ কিছু স্পর্শকাতর কেন্দ্রে নিরাপত্তার কারণে এক ঘণ্টা আগে ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হয়।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বিকেল ৫টা পর্যন্ত মোট ভোটদানের হার দাঁড়ায় ৬০.১৩ শতাংশ। মোট ৩.৭৫ কোটি ভোটারের মধ্যে প্রায় ১০.৭২ লক্ষ ভোটার প্রথমবার ভোট প্রদান করেন এবং এই দফায় ১৮–১৯ বছর বয়সী তরুণ ভোটারের সংখ্যা ছিল ৭ লক্ষ ৭৮ হাজারের মতো।

নির্বাচন কমিশন এই প্রথমবার বিহারের প্রত্যেকটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে সিসিটিভি নজরদারি চালু করেছে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার এবং দুই নির্বাচন কমিশনার সুখবীর সিংহ সান্ধু ও বিবেক জোশি দিল্লির নির্বাচন ভবনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে দিনভর ভোটগ্রহণ পর্ব সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেন।


এদিকে যেসব কেন্দ্রে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ করা হবে, প্রথম দফার ভোটের দিন সেইসব এলাকায় হাই ভোল্টেজ নেতা–নেত্রীদের জমাটি প্রচারও লক্ষ্য করা গিয়েছে। এনডিএ এবং মহাগঠবন্ধনের তারকা প্রচারকরা একে অপরের বিরুদ্ধে কড়া আক্রমণ শানিয়েছেন এবং ভোটারদের প্রতি তাঁদের দলকে সমর্থন করার জন্য শেষ মুহূর্তের আবেদন জানিয়েছেন।

আরারিয়ার সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মহাগঠবন্ধনের বিরুদ্ধে তোপ দেগে রাজ্যের অতীত ‘জঙ্গলরাজ’-এর কথা স্মরণ করান। আরজেডি শাসনের ১৫ বছরকে তিনি ‘কট্টা, কটুতা, ক্রুরতা, কুশাসন, কুসংস্কার ও দুর্নীতি’-র যুগ বলে বর্ণনা করেন। অন্যদিকে, কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর মন্তব্য, ‘রাজীব গান্ধীর সময়ে মানুষের কণ্ঠস্বর ছিল। আজ মানুষ কথা বলতে ভয় পায়।’

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মহাগঠবন্ধনকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘এরা মহাঠগবন্ধন।’ তিনি দাবি করেন, বিহারে ফের ‘জঙ্গলরাজ’ আসতে দেওয়া যাবে না।

নির্বাচনের প্রথম দফায় সবচেয়ে আলোচিত প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম তেজ প্রতাপ যাদব, যিনি আরজেডি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে জেজেডি প্রার্থী হিসেবে মহুয়া কেন্দ্রে লড়াইয়ে নেমেছেন। তিনি দাবি করেন, ‘এই আসনে বিজয় হবেই। বাবা–মায়ের আশীর্বাদ আমার সঙ্গে আছে।’

প্রসঙ্গত, দিনভর শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ হলেও লখিসরাইয়ে একটি অনভিপ্রেত ঘটনাকে ঘিরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। অভিযোগ, আরজেডি সমর্থকরা উপমুখ্যমন্ত্রী বিজয় কুমার সিনহার কনভয়ে আক্রমণ চালায়। ইতিমধ্যে প্রশাসন এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

প্রথম দফায় ১৮টি জেলার ১২১টি আসনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হল। মোট ১,৩১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় দফার ভোটের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ভোটযুদ্ধ।

শাসক এনডিএ— বিজেপি, জেডিইউ, এলজেপি, হাম ও আরএলএম— মরিয়া হয়ে ক্ষমতার লড়াইয়ে নেমেছে। ২০২০ সালে তারা অল্প ব্যবধানে ১২৫ আসন পেয়ে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল। অন্যদিকে, আরজেডি–কংগ্রেস–ভিআইপি–বামপন্থীদের মহাগঠবন্ধন মনে করছে, জনমত এবার পাল্টে গিয়েছে এবং তারা জয়ের সম্ভাবনা দেখছে।

প্রথম দফার ভোটেই স্পষ্ট— বিহারের রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে। আর কয়েকটি আসনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইই ঠিক করে দেবে রাজ্যের ভবিষ্যৎ।