রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সভায় আমেরিকা ও চিনকে কড়া বার্তা দিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। কোনও দেশের নাম না করে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ‘ভারত নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে এবং নিজের বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেবে। জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যখন বড় দেশগুলি নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে ব্যস্ত, তখন ভারত তার স্বাধীন অবস্থান বজায় রেখে নিজের পথ বেছে নিচ্ছে।’
সম্প্রতি রাশিয়া থেকে তেল আমদানির বিষয়ে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের টানাপোড়েন চরমে উঠেছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনায় ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে আমেরিকা। যদিও তাতে একচুলও পিছু হটেনি নয়াদিল্লি। এই প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রসঙ্ঘে জয়শঙ্কর বলেন, ‘ভারত তার নিজের পছন্দ নিজেই বেছে নেবে।’ তাঁর এই মন্তব্যকে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল আমেরিকার প্রতি স্পষ্ট বার্তা বলেই ব্যাখ্যা করছে।
তবে শুধু আমেরিকা নয়, নাম না করে চিনকেও একহাত নেন তিনি। সিদ্ধান্ত নেবে বলেন, ‘বর্তমান অস্থির পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সম্পদের সরবরাহ ও বণ্টন যাতে সহজ, সুষ্ঠু এবং স্বাভাবিক হয়, সেটাই জরুরি।’ তাঁর এই মন্তব্যের মাধ্যমে দুষ্প্রাপ্য খনিজ সম্পদের সরবরাহ নিয়ে চিন যে দীর্ঘদিন ধরে চাপ তৈরির কৌশল নিয়ে থাকে, সেটাই যেন তুলে ধরতে চাইলেন তিনি।
বিশেষ করে ইলেকট্রনিক গাড়ি তৈরিতে ব্যবহৃত দুষ্প্রাপ্য খনিজ পদার্থের উপর বিশ্ব বাজার অনেকটাই চিনের উপর নির্ভরশীল। চিন অতীতে এই খনিজের রপ্তানিতে একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে, যার ফলে অসুবিধায় পড়েছিলেন ভারতের গাড়ি নির্মাতারা। এই অবস্থায় সরবরাহ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরলেন জয়শঙ্কর।
তেল আমদানির প্রসঙ্গে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছেন বিশেষজ্ঞরা। রাশিয়া থেকে চিন আমদানির নিরিখে ভারতের তুলনায় অনেক বেশি তেল কিনলেও, তাদের উপর কোনও কঠোর শুল্ক আরোপ করেনি আমেরিকা। এটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেকের মতে, চিনের হাতে দুষ্প্রাপ্য খনিজের ভাণ্ডার থাকায় এবং মার্কিন বাজার সেই খনিজের উপর নির্ভরশীল হওয়ায়, মার্কিন প্রশাসন চিনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করছে।
এই পরিস্থিতিতে ভারতের তরফে বার্তা স্পষ্ট, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক যতই জটিল হোক না কেন নয়াদিল্লি তার বিদেশনীতিকে অন্য দেশের চাপে নয়, নিজের স্বার্থ ও নীতির ভিত্তিতেই পরিচালনা করবে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারত যে নিজস্ব অবস্থান নিয়ে চলবে এবং বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকা নিতে প্রস্তুত, রাষ্ট্রসঙ্ঘে জয়শঙ্করের বক্তব্য ছিল তারই ইঙ্গিত।