পদাতিকের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ভৈরব কমান্ডো ও অশ্বিনী ড্রোন প্লাটুন

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

সীমান্তে শত্রুর আক্রমণ ঠেকানো ও দ্রুত পাল্টা আঘাতের ক্ষমতা বাড়াতে ভারতীয় সেনা এবার ব্যাটালিয়ন স্তরে ব্যাপক সংস্কার করছে। সেনা সূত্রের খবর অনুযায়ী জানা গিয়েছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ৩৮২টি পদাতিক ব্যাটালিয়নের সঙ্গে যুক্ত করা হবে ‘ভৈরব’ নামের বিশেষ কমান্ডো ইউনিট এবং প্রতিটি ব্যাটালিয়নের সঙ্গে থাকবে একক ‘অশ্বিনী’ ড্রোন প্লাটুন।

সেনার পদাতিক বাহিনীর ডিরেক্টর লেফটেন্যান্ট জেনারেল অজয় কুমার বুধা জানিয়েছেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’-পরবর্তী পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে পাওয়া অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই কাঠামোগত পরিবর্তন নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য সীমান্তকে আরও নিশ্ছিদ্র করা এবং ছোট ইউনিট থেকেই দ্রুত ও মারকাটারি পাল্টা আক্রমণ চালানোর সক্ষমতা তৈরি করা।’

সূত্র বলেছে, প্রথম পর্যায়ে পাঁচটি পূর্ণাঙ্গ ‘ভৈরব কমান্ডো’ ব্যাটালিয়ন গড়া হচ্ছে। প্রতিটি ব্যাটালিয়নে থাকবেন প্রায় ২৫০ জন বিশেষ প্রশিক্ষিত জওয়ান, যাঁরা বিশেষ স্বল্পদৈর্ঘ্যের অভিযানে যোগ দিতে পারবেন। এসব কমান্ডো বাহিনী পদাতিক, সিগন্যাল ও আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিটের অভিজ্ঞ অফিসার ও জওয়ানদের কাছ থেকে নির্বাচিত করে গঠন করা হবে।


সেনা কমান্ডের পরিকল্পনা অনুযায়ী, শুধু মানুষের কাঠামোই নয়, বদলানো হচ্ছে অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের কাঠামোও। সাবেকি অ্যাসল্ট রাইফেল, হালকা মেশিনগান ও মর্টারের পাশাপাশি বরাবরের চেয়ে বেশি হারে যোগ হচ্ছে রকেট লঞ্চার, ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এবং ভারী মেশিনগান। আর যোগাযোগ ব্যবস্থায় পুরনো রেডিওর পরিবর্তে ব্যবহার করা হবে আধুনিক প্রোগ্রামভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, যা দুর্গম ও বিচ্ছিন্ন পরিবেশেও দ্রুত তথ্য আদানপ্রদান নিশ্চিত করবে।

সীমানা পাহারা ও নজরদারির সক্ষমতা বাড়াতে প্রতিটি পদাতিক ব্যাটালিয়নের সঙ্গে যোগ করা হচ্ছে একক ড্রোন প্লাটুন। এ সব ড্রোন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে স্থির ও সরল বহিরাগত লক্ষ্য সনাক্ত, নজরদারি ও হামলার পূর্বাভাস জানাতে সক্ষম হবে। সেনা সূত্রের ভাষ্য অনুযায়ী, ছোট ও দ্রুত সঞ্চালিত প্লাটুনগুলোই এখন ভবিষ্যতে যুদ্ধের সারপ্রাইজ এলিমেন্ট হিসেবে কাজ করবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ন্ত্রণরেখায় ইতিমধ্যেই কিছু ব্যাটালিয়নে বিশেষ প্রশিক্ষিত ‘ঘাতক’ ইউনিট সংযুক্ত করার ফলে পাক ফৌজের মোকাবিলায় তাৎপর্যপূর্ণ সাফল্য লক্ষ্য করা গেছে। এই অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্ব সীমান্তেও একই মডেল সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। সেনা শীর্ষ দপ্তর বলছে, সীমান্তকে প্রতিরক্ষায় আরও কার্যকর ও বহুমুখী করা হচ্ছে।

রক্ষণশীল পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সামরিক কৌশলের এ ধরণের পরিবর্তন কেবল প্রতিরক্ষা নয়, প্রতিরোধে প্ররোচিত করে দ্রুত ও নিয়ন্ত্রিত পাল্টা হামলার মধ্য দিয়ে সংঘাতের মাত্রা কমানোরও সুযোগ করে দেয়। অন্যদিকে, নিন্দুকরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন যে, বিশেষায়িত একদল বাহিনীর দ্রুত প্রসার ভবিষ্যতে নীতি ও ব্যবহারে জটিলতা তৈরি করতে পারে, যা কড়া তত্ত্বাবধান দাবি করবে।

সেনা কর্তৃপক্ষ আগামী কয়েক মাসে এরই মধ্যে নির্ধারিত ৩৮২টি পদাতিক ব্যাটালিয়নের মধ্যে ধাপে ধাপে ভৈরব কমান্ডো ইউনিট ও অশ্বিনী ড্রোন প্লাটুন সংযুক্ত করবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। কৌশলগত বিষয়গুলি নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে, এই বদল কি ভারতের সীমান্ত নীতি ও প্রতিরক্ষাগঠনে একটি স্থায়ী মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে, নাকি তা সময়ের সঙ্গে আরও প্রত্যাঘাতের কৌশলগত সমন্বয়ের একটি অংশ হয়ে থাকবে।