দেশের প্রধান বিচারপতি বিআর গাবাইয়ের দিকে জুতো ছুঁড়ে মারার ঘটনায় অভিযুক্ত আইনজীবী রাকেশ কিশোরের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। গত সোমবার এই ঘটনা ঘটার পরই আইনজীবীর ওকালতির লাইসেন্স সাসপেন্ড করে দেয় বার কাউন্সিল। এবার তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ।
গত ৬ অক্টোবর আদালতে শুনানি চলাকালীন আইনজীবী রাকেশ কিশোর বিচারপতি বিআর গাবাইয়ের দিকে জুতো ছুঁড়ে মারার চেষ্টা করেন।অভিযুক্ত আইনজীবীর অভিযোগ , বিচারপতি গাবাই সনাতন হিন্দু ধর্মের অবমাননা করেছেন। আইনজীবীর ছুঁড়ে মারা জুতোটি অবশ্য বিচারপতির বেঞ্চ পর্যন্ত পৌঁছায়নি। তার আগেই উপস্থিত অন্যান্যরা সেটি ধরে ফেলেন। পরে প্রবীণ ওই আইনজীবীকে আদালত কক্ষ থেকে বার করে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় শুরু হয়। প্রধান বিচারপতি বিআর গাবাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন নরেন্দ্র মোদী। পরে এই ঘটনার নিন্দা করে প্রধানমন্ত্রী এক্স বার্তায় লেখেন, সমস্ত ভারতবাসী এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ। রাকেশ কিশোরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে, কিন্তু পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে, বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া এই আইনজীবীর লাইসেন্স সাসপেন্ড করে দেয়। যদিও তাঁর কাজের জন্য কোনও অনুশোচনা প্রকাশ করেননি অভিযুক্ত আইনজীবী।
দিল্লি পুলিশ ঘটনার দিন অভিযুক্ত আইনজীবীকে ছেড়ে দিলেও এবার আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে বেঙ্গালুরুর বিধান সৌধ থানায়। যিনি অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনিও একজন আইনজীবী। অভিযোগকারী আইনজীবীর বক্তব্য, বিচারব্যবস্থার মর্যাদা ও সম্ভ্রম রক্ষা করতেই অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে রাকেশের বিরুদ্ধে ‘জ়িরো এফআইআর’ অর্থাত অন্য থানায় স্থানান্তরযোগ্য এফআইআর রুজু করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৩২ ধারা অর্থাত বিচারপতির কাজে বাধা এবং ১৩৩ ধারা, যে ধারায় কাউকে অপমান করার উদ্দেশ্যে অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ হয়ে থাকে, সেই ধারায় এফআইআর রুজু করা হয়েছে।
৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে লক্ষ্য করে জুতো ছোঁড়ার চেষ্টার ঘটনার পর অভিযুক্ত আইনজীবীকে আদালত কক্ষের বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন নিরাপত্তাকর্মীরা। তবে ঘটনার পরও সম্পূর্ণ স্বাভাবিকভাবে আদালতের কাজ চালিয়ে নিয়ে যান প্রধান বিচারপতি।অন্য আইনজীবীদেরও তিনি নিজেদের সওয়াল জবাব চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। এজলাসে উপস্থিত আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা আমার উপর কোনও প্রভাব ফেলে না। দয়া করে শুনানি চালিয়ে যান।’ তিনি বলেন, ‘এই সব দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। আমরা বিভ্রান্ত নই। এ সব ঘটনা আমার উপর প্রভাব ফেলতে পারে না।’ তবে এই ঘটনার জেরে কিছুক্ষণের জন্য বিঘ্নিত হয় এজলাসের কাজকর্ম।
প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি এই ঘটনার নিন্দা করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘এটি খুবই খারাপ কাজ। এটি ভারতের সংবিধানের উপর হামলা।’ এই ঘটনার নিন্দা করেছেন, কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীও। তাঁর কথায়, “প্রধান বিচারপতির উপর আক্রমণের নিন্দার কোনও ভাষা নেই। এটি শুধু তাঁর উপর নয়, আমাদের সংবিধানের উপরও আক্রমণ।’ ঘটনার নিন্দায় সরব হন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীও।