রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্স (আরকম)-এর ঋণ সংক্রান্ত অনিয়ম আরও একবার প্রকাশ্যে এল। এবার অনিল আম্বানীর এই সংস্থার ঋণ অ্যাকাউন্টকে ‘প্রতারক’ (ফ্রড) বলে ঘোষণা করল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। এর আগে ঠিক একই পথে হেঁটেছিল দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া।
রবিবার শেয়ার বাজারকে দেওয়া একটি বিজ্ঞপ্তিতে ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, অনিলের সংস্থা ৭২৪.৭৮ কোটি টাকার ঋণ শোধ করেনি। দীর্ঘ সময় ধরে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হলেও কোনও সাড়া মেলেনি। তাই ২০১৭ সালেই এই ঋণকে ‘নন পারফর্মিং অ্যাসেট’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে অভিযোগ, ঋণ নেওয়ার পর চুক্তি লঙ্ঘন করে সেই অর্থ অন্য খাতে ব্যবহার করা হয়েছে।
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া আগে জানিয়েছে, রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্স এবং তার সহযোগী সংস্থাগুলি প্রায় ৩১,৫৮০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিল বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে। সেই অর্থ জটিল আর্থিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গোষ্ঠীর অন্যান্য সংস্থায় সরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সম্প্রতি এই মামলায় সিবিআই সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে। সংস্থার ডিরেক্টর অনিল আম্বানী, একাধিক অজ্ঞাত সরকারি আধিকারিক এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে তারা।
এসবিআইয়ের অভিযোগের পর, সিবিআই শনিবার আরকম এবং আম্বানির বাসভবনে তল্লাশি চালায়। সংবাস সংস্থার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্স এবং অনিল আম্বানির দ্বারা সংগটিত প্রতারণার কারণে ২৯২৯.০৫ কোটি টাকার ক্ষতির দাবির ভিত্তিতে সিবিআই আরকম এবং আম্বানির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে।
যদিও অনিল আম্বানীর মুখপাত্র দাবি করেছেন, এসবিআই যে অভিযোগ এনেছে, তা প্রায় ১০ বছর আগের। সেই সময়ে সংস্থার দৈনন্দিন প্রশাসনে অনিল সরাসরি যুক্ত ছিলেন না বলেই জানান মুখপাত্র। তাঁর আরও অভিযোগ, পাঁচজন নন-এগজিকিউটিভ ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া না হলেও, অনিল আম্বানীকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, অনিল আম্বানির তিনটি সংস্থা – রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস, রিলায়েন্স ক্যাপিটাল এবং রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার দেউলিয়ার পথে রয়েছে। রিলায়েন্স হোম ফাইনান্সকে ৬ মাসের জন্য শেয়ারবাজার থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং ৬ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। একটা সময় রাফাল বিতর্কে অনিল আম্বানি চাপের মুখে ছিলেন, কিন্তু ঠিক তখনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতে একটি বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য তাঁর সংস্থা ৬৪৮ কোটি টাকার বরাত পায়। এর আগে, ২০১৯ সালে এরিকসনের সঙ্গে মামলায় ৪৫৮.৭৭ কোটি টাকা জরিমানা দিতে না পারায় অনিলের জেলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। তখন তাঁর দাদা, মুকেশ আম্বানি আর্থিক সাহায্য করে তাঁকে বাঁচান।