অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে ভারতীয় সেনার শক্তি প্রত্যক্ষ করেছে বিশ্ব। ইসলামাবাদকে যেমন যোগ্য জবাব দেওয়া হয়েছে, তেমনি পরোক্ষে বার্তা দেওয়া হয়েছে চিন-বাংলাদেশকেও। উত্তরবঙ্গের ওদলাবাড়ির সাওগাঁ বস্তির কাছে অবস্থিত তিস্তা ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জে ৩ দিন ধরে যুদ্ধের মহড়া চলেছে। এই মহড়ায় একাধারে ইনফ্যানট্রি অর্থাত পদাতিক, আর্টিলারি, আর্মার্ড কর্পস, মেকানাইজড ইনফ্যান্ট্রি, প্যারা স্পেশাল ফোর্সেস, আর্মি অ্যাভিয়েশন, ইঞ্জিনিয়ার্স এবং সিগন্যালস-সহ গুরুত্ব বাহিনীগুলো সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। মহড়ার উল্লেখযোগ্য ছিল ভারতীয় সেনার অস্ত্রভান্ডারে সদ্য যুক্ত ‘নেক্সট জেনারেশন’ অস্ত্রশস্ত্র। মহড়ায় এই যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবহার, যুদ্ধক্ষেত্রে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার ও আধুনিকীকরণের উপর জোর দেওয়া হয়।
যুদ্ধের মহড়ার পাশাপাশি প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে দ্রুত বাহিনীর প্রতিটি বিভাগের মধ্যে কীভাবে সমন্বয় গড়ে উঠতে পারে সেই দিকটিও ঝালিয়ে নেওয়া হয়। বিভিন্ন দুর্গম জায়গায় প্রতিপক্ষের মোকাবিলা করাই শুধু নয়, তাদের নাস্তানাবুদ করতে কীভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে সেই প্রক্রিয়াও ছিল মহড়ার অন্তর্ভুক্ত।
‘তিস্তা প্রহার’ মহড়া অনুষ্ঠিত হয় তিনদিনব্যাপী। মহড়া শেষের পর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ভারতীয় সেনা, ইস্টার্ন কমান্ডের তরফে জানানো হয়, যে কোনও যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারতীয় সেনা একশো শতাংশ প্রস্তুত।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি চিন সফরে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস। সেখানে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ভারতের পূর্ব প্রান্তের সাতটি রাজ্য, যাদের সেভেন সিস্টার্স বলা হয়, ওই বিরাট অঞ্চল কিন্তু পাহাড় আর স্থলভাগে ঘেরা। সমুদ্রপথে যোগাযোগ করার উপায়ই নেই তাদের। বাংলাদেশই হল সমুদ্রপথের রাজা।চিনকে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়ে মহম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এই সমগ্র অঞ্চলে বাংলাদেশই সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক। সুতরাং এটি একটি বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে। ফলে চিনা অর্থনীতির জন্য এটা ভালো খবর।’ চিনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নিয়ে ইউনূস বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক কয়েক বছর ধরে খুবই মজবুত। আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ভালো। চিনের কারণে আমরা খুব উপকৃত হই।’ এই মন্তব্যের ইঙ্গিতে অত্যন্ত স্পষ্ট যে, ভারতের ৭ রাজ্যকে ভেঙে ফেলতে চায় বাংলাদেশ। একই ইচ্ছা চিনেরও।
বাংলাদেশের মুখে এমন মন্তব্যে দুয়ে দুয়ে চার করতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি দিল্লির। কড়া জবাব হিসাবে ভারতের মাটি ব্যবহার করে বাংলাদেশের ব্যবসার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে, কয়েকদিন আগেই ভারত-পাক যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ওপার বাংলার অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ফজলুর রহমান বলেন, দিল্লি-ইসলামাবাদের মধ্যে যুদ্ধ লাগলে নাকি ঢাকার উচিত ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো দখল করে নেওয়া। আর এজন্য তারা হাত মেলাবে চিনের সঙ্গে। পড়শি দেশের এই স্বপ্ন যে কোনও দিনই সফল হবে না তা এই ‘তিস্তা প্রহার’ মহড়া বুঝিয়ে দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, সেভেন সিস্টার্স ভারতের জন্য সংবেদনশীল জায়গা। উত্তর পূর্বের এই রাজ্যগুলো হল অসম, অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়। চিকেন নেক শিলিগুড়ি করিডোর নামেও পরিচিত। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত একটি সংকীর্ণ ভূ-ভাগ এই চিকেন নেক। এলাকাটি প্রায় ২০ থেকে ২২ কিলোমিটার প্রশস্ত ও ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি এমন একটি রুট যা উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলোর সঙ্গে গোটা ভারতকে সংযুক্ত করে। ভৌগোলিক ও কৌশলগত দিক থেকেও চিকেন নেক সংবেদনশীল। এই করিডোরটি নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান এবং চিনের মতো প্রতিবেশী দেশ দিয়ে ঘেরা।
এই করিডোর শুধু সামরিক দিক থেকে নয়, অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর-পূর্ব রাজ্য এবং ভারতের বাকি অংশের মধ্যে প্রধান বাণিজ্য পথ এই চিকেন নেক। অসম-দার্জিলিং-এর চা, কাঠ এবং উত্তর-পূর্বের অন্যান্য সম্পদ এই পথ দিয়ে দেশের বাকি অংশে পৌঁছায়। ফলে মহম্মদ ইউনূসের সেভেন সিস্টার্স-এর উল্লেখ করে ভারতকে পরোক্ষ বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করলেও সে গুড়ে বালি, তা বুঝিয়ে দিয়েছে ভারত।