হাদি ওসমান শরিফের মৃত্যুর পর বাংলাদেশে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। একের পর এক স্থানে হিংসা, উগ্র মৌলবাদীদের তাণ্ডবের ফলে সাধারণ মানুষের মৃত্যু বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আতঙ্ক ও ভয় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এই চরম অরাজকতার জন্য সরাসরি দায়ী করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়ী করছেন।
শেখ হাসিনা একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমার নির্বাচিত সরকারের পতন ঘটেছিল অরাজকতা বাড়ানোর মাধ্যমে। সেই অরাজক পরিস্থিতিই হাদির মৃত্যুর জন্য দায়ী। ইউনূসের আমলে সেই পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, ‘এখন বাংলাদেশে হিংসা রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে, অথচ অন্তর্বর্তী সরকার সবকিছু অস্বীকার করছে। কারণ তাদের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো ক্ষমতা নেই।’
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, ‘সঠিক শাসনব্যবস্থা পুনরায় চালু হলে, ভারত-বাংলাদেশের গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে তৈরি হওয়া বোঝাপড়া এবং অংশীদারিত্ব আবার ফিরে আসবে। ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে।’
শেখ হাসিনা স্পষ্ট অভিযোগ করেছেন, ‘বাংলাদেশে যা চলছে, তার জন্য দায়ী ইউনূস। তিনি দেশটাকে অরাজকতার পথে নিয়ে যাচ্ছেন।’ তিনি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতির জন্যও সমালোচনা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘ইউনূস প্রশাসন লাগাতার ভারত বিরোধী বয়ান দিচ্ছে। ভারত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের বন্ধু এবং অংশীদার।’ শেখ হাসিনা উল্লেখ করেছেন, দুই দেশের সম্পর্ক গভীর এবং মৌলিক। এই সম্পর্ক কোনও অস্থায়ী সরকারের থেকেও অনেক বেশি স্থায়ী।
দেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুজিব কন্যা। তিনি অভিযোগ করেছেন, ‘সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে অন্তর্বর্তী সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ। চরমপন্থীদের সম্পূর্ণভাবে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিদেশনীতি পর্যন্ত এখন চরমপন্থীরাই ঠিক করছে, যা কখনওই কাম্য ছিল না।’
দেশজুড়ে মৌলবাদীদের দাপট নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইউনূস প্রশাসন মৌলবাদীদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। দোষী সাব্যস্ত সন্ত্রাসীরা জেল থেকে মুক্তি পাচ্ছে। জামাত-ই-ইসলামির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে হিংসা বন্ধ করতে শক্তিশালী এবং দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থার প্রয়োজন। বর্তমান অরাজক পরিস্থিতির দায় এড়াতে পারবে না অন্তর্বর্তী সরকার।
বাংলাদেশে অস্থিরতার প্রভাব দিল্লি ও ঢাকার সম্পর্কেও পড়েছে বলে তিনি দাবি করেন। দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসকেই দায়ী করছেন শেখ হাসিনা। তিনি দাবি করেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার আদতে ক্ষমতাহীন। তাই বাংলাদেশে হিংসা এখন স্বাভাবিক ঘটনা।’
শেখ হাসিনা সংবাদসংস্থা এএনআই-কে ইমেল মারফত জানিয়েছেন, ‘এই অশান্তি ইউনূস জমানার মদতপুষ্ট চরমপন্থীদের তৈরি। তারা ভারতীয় দূতাবাসের সামনে মিছিল করেছে, সংবাদপত্রের অফিসে হামলা করেছে, সংখ্যালঘুদের মেরেছে, আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে। ইউনূস সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের জেল থেকে ছেড়ে দিয়ে তাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছেন।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ নতুন করে উত্তপ্ত হওয়ার তিন দিন পরে রবিবার ভারতের বিদেশ মন্ত্রক প্রথম বিবৃতি দিয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতির দিকে নিবিড় দৃষ্টি রাখছে ভারত। সংখ্যালঘুদের উপর হামলার বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
ভারতের বিবৃতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশ মন্ত্রক পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে। তারা দাবি করেছে, ময়মনসিংহের ঘটনা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ভারতের বিবৃতিতে বিষয়টি সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হিসেবে দেখানো হচ্ছে, যা ভিত্তিহীন। অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেছে।