দেশের প্রধান বিচারপতির আসনে বসে থাকা অবস্থায় আদালতের ভেতর তাঁর দিকেই উড়ে গিয়েছিল একটি ‘জুতো’। ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায় গোটা আদালত কক্ষে। অভিযুক্ত আইনজীবী রাকেশ কিশোরকে সঙ্গে সঙ্গে আটক করে নিরাপত্তারক্ষীরা। যদিও প্রধান বিচারপতি বিষয়টি হালকা ভাবেই নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আইনজীবী মহল এবং আদালতের প্রতিনিধিরা একে ‘অভূতপূর্ব আদালত অবমাননা’ বলেই মনে করছেন।
প্রসঙ্গত, গত ৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি বিআর গবই (গগই)-এর বেঞ্চেই ঘটে এই অনভিপ্রেত ঘটনা। তাঁর সঙ্গে তখন ছিলেন বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রন। হঠাৎই রাকেশ কিশোর উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে শুরু করেন। তিনি আচমকাই জুতো ছোঁড়ার চেষ্টা করেন। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই তাঁকে আটক করে আদালত কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়।
এই ঘটনার পর বৃহস্পতিবার বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চে বিষয়টি ফের ওঠে। সেখানে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এবং সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিকাশ সিংহ স্পষ্টভাবে জানান, অভিযুক্ত আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা শুরু করা হোক। তাঁদের বক্তব্য, ‘যে ব্যক্তি দেশের প্রধান বিচারপতির প্রতি এমন আচরণ করতে পারেন, তিনি কেবল একজন মানুষকে নয়, গোটা বিচারব্যবস্থার মর্যাদাকেই আঘাত করেছেন।’
অ্যাটর্নি জেনারেল আর বেঙ্কটরমণও এই প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছেন। তাঁর মতে, এমন ঘটনার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপই একমাত্র বার্তা দিতে পারে যে, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মর্যাদার সঙ্গে ছলচাতুরি করা যাবে না।
তবে সুপ্রিম কোর্ট আপাতত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিচারপতি কান্ত ও বাগচীর বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘সমাজমাধ্যমে এখন এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নানা মন্তব্য ঘুরছে। দেখা যাক, আগামী এক সপ্তাহে বিষয়টি নিয়ে পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়ায়।’
বেঞ্চ একই সঙ্গে সতর্কবার্তাও দিয়েছে যে, বাক্স্বাধীনতার নামে অন্যের সম্মানহানি কোনও ভাবেই সহ্য করা হবে না। সমাজমাধ্যমে আদালত ও বিচারপতিদের বিরুদ্ধে ‘অবমাননাকর মন্তব্য’ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আদালত।
তবে বিচারপতি উজ্জ্বল ভূয়ানের বক্তব্যে সবচেয়ে বেশি সাড়া পড়েছে। তিনি বলেন, ‘এটা কোনও তামাশা নয়। দেশের প্রধান বিচারপতির উপর আক্রমণ মানে সুপ্রিম কোর্টের মর্যাদার উপর সরাসরি আঘাত।’
আইনজীবী মহলের একাংশ মনে করছে, প্রধান বিচারপতি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি উপেক্ষা করলেও, এমন ঘটনায় কঠোর শাস্তি না হলে বিচারব্যবস্থার প্রতি জনগণের শ্রদ্ধা ক্ষুণ্ণ হবে। এক সিনিয়র আইনজীবীর মন্তব্য, ‘এটা শুধু আদালতের মধ্যে ঘটে যাওয়া একটি হঠাৎ ঘটনার প্রশ্ন নয়, এটা আমাদের গণতন্ত্রের মূল্যবোধেরও পরীক্ষা।’
ফলে রাকেশ কিশোরের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা শেষ পর্যন্ত গ্রহণ করা হবে কি না, সেই দিকেই এখন তাকিয়ে আইনি মহল।