বিজেপি শাসিত রাজ্যে তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতির উপর অত্যাচার বেড়েছে: কেন্দ্রের রিপোর্ট

দেশে তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতির (এসসি–এসটি) মানুষের উপর অপরাধের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যানেই সেই ছবি স্পষ্ট। গত পাঁচ বছরে এই সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনই আদালতে বিচার শেষ না হওয়ায় মুলতুবি মামলার বোঝাও বেড়েছে অনেকটাই। সংসদে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেই এসসি–এসটিদের বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনা তুলনামূলক ভাবে বেশি হয়েছে। এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ।

কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল সংসদে লিখিত উত্তরে জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে সারা দেশে এসসি–এসটিদের উপর অত্যাচারের মোট ৪৫,৯৪৮টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছিল। ২০২০ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে হয় ৫০,২৬৮। ২০২১ সালে ৫০,৮৭৯টি মামলা রেকর্ড হয়। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭,৫৬৯ এবং ২০২৩ সালে মোট ৫৭,৭৬৬টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বছরই এই ধরনের অপরাধের সংখ্যা বেড়েছে।

রাজ্যভিত্তিক হিসাব আরও উদ্বেগজনক। ২০২৩ সালে উত্তরপ্রদেশে এসসি–এসটিদের উপর অত্যাচার ব্যাপক। ১৫,১৩০টি মামলা দায়ের হয়েছে। কিন্তু ওই বছরে মাত্র ৪,৩৫৫টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। ফলে রাজ্যে মুলতুবি মামলার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫,০৫২-এ। মধ্যপ্রদেশে ৮,২৩২টি নতুন মামলা হলেও এখনও ৩৭,৫৩৩টি মামলা বিচারাধীন। রাজস্থানে ৮,৪৪৯টি মামলা রেজিস্টার হয়েছে এবং ২২,৪৭০টি মামলা ঝুলে রয়েছে। গুজরাতে ১,৩৭৩টি নতুন মামলা হলেও সেখানে মুলতুবি মামলার সংখ্যা ১৩,৬২৯।

এ ছাড়াও ওড়িশা, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা এবং হরিয়ানার মতো রাজ্যগুলিতেও এসসি–এসটিদের বিরুদ্ধে অপরাধের সংখ্যা বেড়েছে। সরকার জানিয়েছে, এসসি–এসটি অত্যাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করতে জাতি শংসাপত্র থাকা বাধ্যতামূলক নয়। তদন্তের পরে কিছু মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে বন্ধ হলেও মোট মামলার তুলনায় সেই সংখ্যা খুব কম।


পরিসংখ্যান বলছে, আদালতে বিচার প্রক্রিয়া ধীরগতির হওয়াই সবচেয়ে বড় সমস্যা। ২০১৯ সালে যেখানে মুলতুবি মামলার সংখ্যা ছিল ১৯,০৩৪, সেখানে ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১,১১০। বিশেষজ্ঞদের মতে, আইন থাকা সত্ত্বেও দ্রুত বিচার না হলে ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ক্রমবর্ধমান অপরাধ এবং মামলার জট দেশের বিচার ব্যবস্থার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে বলেই মনে করছেন তাঁরা।