অসমে রাহুলের ‘ ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা ‘ ঘিরে তুমুল অশান্তি, লাঠিচার্জ 

গুয়াহাটি, ২৩ জানুয়ারি –  কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধির  ‘ ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা ‘ ঘিরে মঙ্গলবার অসমের রাজধানী গুয়াহাটিতে পুলিশের সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তিতে জড়িয়ে পড়লেন কংগ্রেস কর্মী ও সমর্থকেরা। পুলিশের বাধাকে অগ্রাহ্য করে রাহুল গান্ধির সামনেই ব্যারিকেড ভেঙে ফেলেন কংগ্রেস সমর্থকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। রাহুল গান্ধি বলেন, ‘আমরা ব্যারিকেড ভেঙেছি, কিন্তু আইন নয়।’  ঘটনার পর রাহুল গান্ধির বিরুদ্ধে পুলিশকে এফআইআর করার নির্দেশ দেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত শর্মা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
 
প্রসঙ্গত, ‘ ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা ‘ নিয়ে এই মুহূর্তে অসমের নওগাঁ জেলায় রাহুল গান্ধি। রামমন্দির উদ্বোধনের দিন অসমের বৈষ্ণব সাধক শঙ্করদেবের জন্মস্থান বারদোভা থানায় যাওয়ার কথা ছিল কংগ্রেস নেতার। মঙ্গলবার মেঘালয় হয়ে রাহুল গান্ধির ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ গুয়াহাটিতে প্রবেশ করে। তবে গুয়াহাটিতে প্রবেশের আগে থেকেই যাত্রার পথ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার সঙ্গে রাহুল গান্ধির বিবাদ বাধে। রাহুল গান্ধিকে  ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র  পথ বদলের কথা জানান অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। যানজট হতে পারে জানিয়ে গুয়াহাটি শহরের মধ্য দিয়ে যাত্রা না করার আবেদন জানান তিনি। যাত্রা ঠেকাতে খানাপাড়ায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে হিমন্ত বিশ্বশর্মার প্রশাসন। ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই বাধাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একেবারে ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যান কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা। পুলিশ বাধা দিলে দু-পক্ষের মধ্যে ধ্বস্তাধস্তি বাধে।
 
গত ১৪ জানুয়ারি মণিপুর থেকে এই ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ শুরু করেছিলেন রাহুল। তার পর সেই র‌্যালি নাগাল্যান্ড হয়ে অসমে ঢুকেছে ১৮ জানুয়ারি। কিন্তু বিজেপিশাসিত এই রাজ্যে ঢুকতেই কংগ্রেসে এই ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ বাধার মুখে পড়েছে। সোমবারই একটি মন্দিরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় বলে দাবি করেছিলেন রাহুল। মন্দিরে ঢুকতে গেলে কর্তৃপক্ষ তাঁকে বাধা দেন। আর তার পরই নওগাঁওতে অবস্থানে বসেন কংগ্রেস নেতা।
 
পুলিশের সঙ্গে দলীয় কর্মীদের ধ্বস্তাধস্তির পরই অসম সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করে কংগ্রেস। প্রথম থেকে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’-য় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে, তাঁদের কনভয়ের উপর হামলা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ কংগ্রেসের। শেষ পযন্ত  গুয়াহাটির বাইপাস দিয়ে ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে এভাবে কোনও কিছু আটকানো যায় না বলে মন্তব্য করেন রাহুল।
 
কংগ্রেস কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধুন্ধুমারের ঘটনার পরই অসম পুলিশকে রাহুল গান্ধির বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।  মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা এক্সে লেখেন, “এই জাতীয় ‘নকশাল’দের মতো আচরণ করা হচ্ছে এবং এটা অসমের সংস্কৃতি নয়। আমরা একটি শান্তিপ্রিয় রাজ্য।” তিনি লেখেন, ” আমি ডিজিপিকে নির্দেশ দিয়েছি রাহুল গান্ধির বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য। রাহুল গান্ধি ভিড়কে উত্তেজিত করেছেন। এই ভিডিও তার প্রমাণ।” রাহুল গান্ধির এই ধরণের আচরণের জন্য গুয়াহাটিতে নিয়ম লঙ্ঘন হয়েছে, যানজটের সৃষ্টি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
 
মঙ্গলবার রাহুল গান্ধির ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’  গুয়াহাটিতে ঢুকতে পারে বলে খবর ছিল রাজ্য প্রশাসনের কাছে। তাই আগে থেকেই গুয়াহাটির গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথগুলি নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়। সোমবার সকালে পাঁচ হাজারেরও বেশি কর্মী-সমর্থক নিয়ে যখন সেই র‌্যালি গুয়াহাটিতে ঢোকার চেষ্টা করে, তখনই সেটিকে আটকে দেয় পুলিশ। এর পরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রাহুলের ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র জমায়েত ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। আহত হন কংগ্রেসের বেশ কয়েক জন নেতা-কর্মী।