মেডিক্যাল পঠনপাঠনে স্বচ্ছতা আনতে একগুচ্ছ নির্দেশ ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের

মেডিক্যাল শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে কঠোর পদক্ষেপ করল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন। কয়েক বছর ধরেই অনুমোদন ছাড়াই কোর্স ফি বৃদ্ধি, ইন্টার্নদের ভাতা প্রদানে অনিয়ম এবং অতিরিক্ত আসন বাড়ানোর মতো একাধিক অভিযোগে বারবার কাঠগড়ায় উঠতে হয়েছে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিকে। এবার সেই অনিয়ম রুখতে দেশের সমস্ত বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করল কমিশন। কমিশনের নির্দেশ, আগামী ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিটি কোর্সের ভর্তি সংক্রান্ত ফি, প্রাক-কাউন্সেলিং পর্যায়ের খরচ এবং ইন্টার্ন সহ জুনিয়র ও সিনিয়র রেসিডেন্টদের ভাতা সংক্রান্ত সব তথ্য প্রকাশ করতে হবে সংশ্লিষ্ট কলেজগুলিকে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে তথ্য জমা না দিলে কড়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।

মেডিক্যালে ভর্তি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই একাধিক মামলা চলছিল দেশের বিভিন্ন আদালতে। ফি অনিয়ম ও ইন্টার্নদের থেকে বেআইনি ফি আদায়ের মতো ঘটনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। সেই রায় অনুযায়ী, প্রতিটি বেসরকারি ও ‘ডিমড’ বিশ্ববিদ্যালয়কে ভর্তি শুরুর আগেই বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতেই হবে। কমিশনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বলা হয়েছে – অনুমোদনহীন কোনও কোর্সে ভর্তি নেওয়া যাবে না এবং ফি ধার্য করাও যাবে না। এমন হলে তা অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হবে। প্রয়োজনে অনুমোদন বাতিল, ভর্তি প্রক্রিয়া স্থগিত এবং আর্থিক জরিমানার ব্যবস্থাও করা হবে।

শুধু ফি ও ভাতা নয়, এবার থেকে প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজকে নিজেদের ওয়েবসাইটে বিভাগভিত্তিক ফ্যাকাল্টি সদস্যদের তালিকাও আপডেট রাখতে হবে প্রতি মাসে। কোন বিভাগে কতজন শিক্ষক রয়েছেন, কারা প্রিন্সিপাল বা ডিন পদে রয়েও বিভাগে শিক্ষকতা করছেন, এই সব তথ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। কমিশনের মতে, পঠনপাঠনের মান উন্নত রাখতে এবং ছাত্রদের স্বার্থে এই তথ্যপ্রকাশ বাধ্যতামূলক। কমিশন জানিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভাতা এবং ফি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ না করা হলে শোকজ করা হবে। এ ছাড়াও আলাদা করে কলেজ কর্তৃপক্ষকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হতে পারে।


মেডিক্যাল পড়ুয়াদের অভিযোগ, বহু প্রতিষ্ঠানে নিয়মবহির্ভূতভাবে ভর্তি ফি বাড়ানো হয়েছে, আবার ইন্টার্নশিপ করতে গিয়েও আলাদা করে টাকা দিতে হয়েছে। এই সব অনিয়ম বন্ধ করতেই এবার কড়া রাস্তায় হাঁটল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন। কমিশন সূত্রে খবর, শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় এবং শিক্ষা ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও নৈতিকতা বজায় রাখতেই এই নির্দেশিকা। যে প্রতিষ্ঠান নির্দেশ মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোর্সের অনুমোদন বাতিল ছাড়াও ভর্তি প্রক্রিয়াও বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।