শিবরাম চক্রবর্তীর কাঞ্চনের কথা মনে আছে। কৌতুলের বশে ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ কলকাতা চলে আসে। তারপর কলকাতার বুকে বালকের নানা ঘটনা নিয়ে গল্প এগোতে থাকে। বাড়ি থেকে না পালালেও নিছক কৌতূহলের বসে কাবুলিয়ালার দেশের এক নাবালক চলে এসেছে দিল্লিতে। দিল্লিতে আসার ঘটনাটিও বেশ অত্যাশ্চর্যজনক। দিল্লিগামী একটি বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ারে লুকিয়ে ছিল ১৩ বছরের ওই কিশোর। প্রায় দু’ঘণ্টা সেখানে লুকিয়ে ছিল সে। ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানটি অবতরণের পর বিষয়টি জানাজানি হয়।
সরকারি মতে, ওই ছেলেটি কাবুল বিমানবন্দরের রেস্ট্রিক্টেড বা নিষিদ্ধ এলাকায় কোনও ভাবে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়। এরপরেই সে লুকিয়ে পড়ে কেএএম এয়ারের ফ্লাইট আরকিউ-৪৪০১ এর পিছনের কেন্দ্রীয় ল্যান্ডিং গিয়ার বগির ভিতরে। কাবুলের ওই বিমানটি প্রায় দু’ঘণ্টা পর দিল্লিতে এসে পৌঁছয়। রবিবার সকাল ১১টা নাগাদ দিল্লির বিমানবন্দরে নামে বিমানটি।
বিমান অবতরণের পর ছেলেটি সেখানে ঘোরাঘুরি করতে থাকে। বিমানকর্মীরা ওই নাবালককে বিমানের কাছে ঘোরাঘুরি করতে দেখে সঙ্গে সঙ্গে বিমানের নিরাপত্তাকর্মীদের বিষয়টি জানানো হয়। উত্তর আফগানিস্তানের কন্ডুজ এলাকার বাসিন্দা ওই কিশোর। তাকে বিমানকর্মীরা ধরে তুলে দেয় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ-এর হাতে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ৩ নম্বর টার্মিনালে।
মৃত্যুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার আঁকড়ে কিশোর কীভাবে কাবুল থেকে দিল্লি এল তা নিয়ে অবাক সকলেই। স্বভাবিকভাবেই এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়েও।সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর অনুসারে, রবিবার কাবুল বিমানবন্দর থেকে সকাল ৮.৪৬ মিনিটে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল বেসরকারি বিমানসংস্থা কেএএম এয়ার-এর বিমান আরকিউ-৪৪০১।
বিমানটি দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দরে পৌঁছয় সকাল ১০.২০ মিনিটে। জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, নিরাপত্তাকে ফাঁকি দিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে লুকিয়ে কাবুল বিমানবন্দরে প্রবেশ করেছিল ওই কিশোর। বিমানটি ইরানে যাবে বলে ভেবেছিল সে। তবে এই ভয়াবহ বিমান সফরের পরও কিশোরের প্রাণ বেঁচে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই আশ্চর্য ওয়াকিবহাল মহল।
বিমান উড়ান শুরুর পর চাকা ভিতরে ঢুকে যায়। সেখানকার দরজাও বন্ধ হয়ে যায়। চাকা ভিতরে প্রবেশের পর সামান্য ফাঁকা থাকে। তবে সেখানে গুটিসুটি মেরে বসা সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, বিমান আকাশে ওড়ার পর ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার ফুট উচ্চতায় যায়। তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৪০ থেকে ৬০ ডিগ্রি পর্যন্ত। অক্সিজেনও থাকে না বললেই চলে। এই অবস্থায় ওই নাবালকের বেঁচে থাকা চরম আশ্চর্যজনক ব্যাপার। কিশোরটিকে আটক করা হয়েছে। যদিও কিশোর নাবালক হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে না বলে জানা গিয়েছে।
কেএএম এয়ারলাইন্সের নিরাপত্তা কর্মীরা ল্যান্ডিং গিয়ারের অঞ্চলটি ভালো করে পরিদর্শন করেন। সেখানে একটি ছোট লাল স্পিকার খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। স্পিকারটি ওই নাবালকের বলে মনে করছেন তাঁরা। আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ওই বিমানে নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল কিনা তাও পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। তল্লাশির পর বিমানটিকে নিরাপদ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে বিমানে এমন বিপজ্জনক সফর এই প্রথমবার নয়। ১৯৯৬ সালে দিল্লি থেকে লন্ডনগামী একটি বিমানে একইভাবে সফর করেছিল দুই ভাই। অক্সিজেনের অভাব ও চরম শীতের কারণে তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছিল। তবে আশ্চর্যজনকভাবে বেঁচে যায় অপরজন।