সুদীপের জায়গায় অভিষেককে তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা ঘোষণা মমতার

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

‘প্রবীণ’ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জায়গায় লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেতা হলেন ‘নবীন’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার তৃণমূলের সাংসদদের নিয়ে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের অভ্যন্তরীণ মহলে এই সিদ্ধান্তকে শুধু প্রয়োজনীয় নয়, বরং ‘তাৎপর্যপূর্ণ পালাবদল’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রবীণ সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শরীর দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থতায় ভুগছে। বাদল অধিবেশনের শুরু থেকে তাঁকে সংসদে দেখা যায়নি। সেই প্রেক্ষিতেই, লোকসভায় তৃণমূলের সংসদীয় দলনেতার দায়িত্ব থেকে তাঁকে অব্যাহতি দিয়ে এই পদে বসানো হল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে – যিনি বর্তমানে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সাংসদ জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন। সুদীপ জানান, তিনি যোগ দিয়েছেন এবং চাইলে দিল্লিতে আসতেও পারেন। কিন্তু নেত্রী তাঁকে স্পষ্ট জানান, পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়াই এখন প্রাধান্য। লোকসভায় তৃণমূলের সাংসদদের সমন্বয়ের দায়িত্ব, বক্তব্য নির্ধারণ এবং সাংসদদের প্রতিনিধি নির্বাচন – সবই এখন থেকে দেখবেন অভিষেক।


তৃণমূল সূত্রে খবর, অনেকের মতে এই সিদ্ধান্তে তৃণমূলের সাংসদদের মধ্যে ‘প্রবীণ বনাম নবীন’ দ্বন্দ্বে নবীন প্রজন্মের অবস্থান আরও জোরদার হল। সৌগত রায়ের মতো প্রবীণ নেতারাও বর্তমানে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। এই পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক দায়-দায়িত্বে ধীরে ধীরে প্রজন্মান্তরের ছোঁয়া লাগার ইঙ্গিত স্পষ্ট।

উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরেই দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর নেতৃত্বে দল অনেক জেলায় পুনর্গঠনের পথে হাঁটে। সর্বভারতীয় নানা ইস্যুতে অভিষেকের সোচ্চার অবস্থানও দলের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরে বিদেশ সফরকারী সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলে তৃণমূলের তরফে অভিষেককেই মনোনীত করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতেও তাঁর অবস্থান যে আরও সুদৃঢ় হচ্ছে, তার ইঙ্গিত মিলেছিল।

রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা এখনও ডেরেক ও’ব্রায়েন। লোকসভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই পদে বসিয়ে স্পষ্টভাবে প্রজন্মান্তরের নেতৃত্বকে তুলে আনলেন দলনেত্রী। ফলে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক রূপরেখায় দলের ভেতরের সমীকরণে বড় রদবদলের বার্তা স্পষ্ট। তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, এ এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত – যা শুধু সাংগঠনিক নয়, দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের রূপরেখাও নির্ধারণ করছে।