বাংলাদেশি সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হল এক পরিযায়ী শ্রমিককে। অকুস্থল বামশাসিত রাজ্য কেরল। ঘটনাটি গত সপ্তাহের। যদিও প্রকাশ্যে এসেছে সোমবার। জানা গিযেছে, কেরলের পালাক্কাড়ে গত সপ্তাহে বাংলাদেশি সন্দেহে বেধড়ক মারধর করা হয় এক পরিযায়ী শ্রমিককে। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। ঘটনাটি জানাজানি হতেই দোষীদের আইনানুগ শাস্তির আশ্বাসের পাশাপাশি নিহত শ্রমিকের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে পিনারাই বিজয়নের সরকার। বিভিন্ন মহলে দাবি, নিহত শ্রমিক দলিত ছিলেন। সে সব দাবিও খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে বিজয়ন সরকার।
সূত্রের খবর, নিহত পরিযায়ী শ্রমিকের নাম রামনারায়ণ বঘেল। বছর ৩১-এর রামনারায়ণ ছত্তিশগড়ের শক্তি জেলার বাসিন্দা ছিলেন। রামনারায়ণের আট ও ১০ বছর বয়সি দুই ছেলে রয়েছে বাড়িতে । ঘটনার মাত্র দিন চারেক আগেই তিনি কাজের খোঁজে পালাক্কাড়ে গিয়েছিলেন। নিহতের আত্মীয় জানিয়েছেন, ঘটনার দিন অর্থাৎ, ১৭ ডিসেম্বর রাস্তায় বেরিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ওয়ায়ালায়া থানার আত্তাপ্পাল্লামের কাছে এসে পথ হারিয়ে ফেলেন রামনারায়ণ। সেই সময় তাঁকে ইতস্তত ঘুরতে দেখে সন্দেহ হয় স্থানীয় কিছু মানুষের। এরপরই ‘চোর’ সন্দেহে তাঁকে ঘিরে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন গ্রামবাসীরা। এতো মানুষের প্রশ্নে বেশ ঘাবড়ে যান রামনারায়ণ। কী নাম, কোথা থেকে এসেছেন, মাতৃভাষা কী— এ সব নানা প্রশ্নের জবাব দিলেও এর মাঝে উপস্থিত জনতার একাংশ ওই শ্রমিককে ‘বাংলাদেশি’ বলে সম্বোধন করে মারধর করতে শুরু করে দেন। এই মারধরের ভিডিও ইতিমধ্যে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
সেই ভিডিও-এ দেখা যাচ্ছে, মাটিতে বসে রয়েছেন রামনারায়ণ। তাঁকে ঘিরে রেখেছেন গ্রামবাসীরা। সকলে ওই শ্রমিককে একের পর এক প্রশ্ন করছেন। ভিডিওয় রামনারায়ণকে বার বার ‘বাংলাদেশি’ বলেও সম্বোধন করতে শোনা গিয়েছে বাকিদের। এমনকি, গণধোলাইয়ে ওই যুবক প্রায় অচৈতন্য হয়ে পড়লেও আশপাশের কেউ ক্ষান্ত হননি। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে পালাক্কাড় জেলা সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শরীরে একাধিক আঘাত এবং রক্তক্ষরণের জেরে রাতে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। ওই ঘটনায় বিশেষ দল গড়ে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। ঘটনায় জড়িত পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাকিদেরও খোঁজ চলছে। রামনারায়ণের মরদেহ বিমানে করে ছত্তিশগড়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে সরকার।
পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনীতি। ঘটনার তীব্র নিন্দা করে শোক প্রকাশ করেছে কেরলের বাম সরকার। সঙ্ঘ এবং দেশের বিজেপি সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে পালাক্কাড়ের সিপিএম নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী এমবি রাজেশ দৈনিক স্টেটসম্যানকে জানিয়েছেন, দেশে যে ‘ঘৃণার রাজনীতির প্রচার’ সঙ্ঘ এবং বিজেপি চালাচ্ছে এটা তারই পরিণতি।
এরপর পাঁচের পৃষ্ঠায়