দূষিত জল খেয়ে ইন্দোরে মৃত ৭, অসুস্থ ৪০-এর বেশি

ভারতের ‘সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন শহর’-এর তকমা পাওয়া ইন্দোরে ভয়াবহ জলবাহিত বিপর্যয় সামনে এল। দূষিত পানীয় জল খেয়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত সাত জনের। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ৪০ জনেরও বেশি। সরকারি নথিতে যদিও প্রথমে মৃতের সংখ্যা তিন বলা হয়েছিল, পরে ইন্দোরের মেয়র পুষ্যমিত্র ভার্গব স্বীকার করেন যে বাস্তবে মৃতের সংখ্যা বেড়ে সাত।

ইন্দোরের ভগীরথপুরা এলাকায় ২৪ ডিসেম্বর থেকে হঠাৎ করে বমি, ডায়রিয়া ও জ্বরের উপসর্গ নিয়ে মানুষের অসুস্থ হওয়ার খবর সামনে আসে। কয়েক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেয়। এখনও পর্যন্ত এক হাজারের বেশি বাসিন্দাকে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বাড়ির কল থেকে দুর্গন্ধযুক্ত ও নোংরা জল আসছিল, যার ফলেই দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে।

ঘটনার পর মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দেন। তিন জন পুরসভার আধিকারিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এক জন জোনাল অফিসার এবং এক জন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এক জন সাব-ইঞ্জিনিয়ারকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি গোটা ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণাও করেছেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, দূষিত জল নিয়ে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন। স্থানীয় এক বাসিন্দার দাবি, প্রায় ছয় মাস ধরে এই সমস্যা চলছিল। একাধিকবার অভিযোগ জানানো হলেও কোনও কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত শিশু ও বৃদ্ধদের অসুস্থ হয়ে পড়ার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।


প্রাথমিক তদন্তে পুরসভার চরম গাফিলতির ছবি ধরা পড়েছে। পুরসভা জানিয়েছে, ভগীরথপুরার পানীয় জলের মূল পাইপলাইনটি একটি পাবলিক টয়লেটের নীচ দিয়ে গিয়েছে। সেই লাইনে লিকেজ থাকায় নর্দমার জল পানীয় জলের পাইপলাইনে ঢুকে পড়ে। এলাকায় একাধিক ভাঙা ডিস্ট্রিবিউশন লাইনও পাওয়া গেছে। যদিও চার মাস আগে ২.৫ কোটি টাকা খরচে নতুন পাইপলাইন বসানোর টেন্ডার পাশ হয়েছিল, সেই কাজ এখনও শুরু হয়নি।

পরিস্থিতি সামাল দিতে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ঘরে ঘরে সমীক্ষার কাজে নামানো হয়েছে। তাঁদের অনেকেই নিজেরাও সংক্রমিত হয়েছেন। এলাকায় সঞ্জীবনী ক্লিনিক ও হাসপাতালে এখনও রোগীর ভিড় উপচে পড়ছে। ‘পরিচ্ছন্ন শহর’-এর গর্বের আড়ালে এমন বিপর্যয় ইন্দোর প্রশাসনের বড় ব্যর্থতা বলেই মনে করছেন সাধারণ মানুষ। তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।