২০২৫: ফিরে দেখা মৃত্যু মিছিলের বছর

প্রতিনিধিত্বমূলক ফাইল চিত্র

নতুন বছরের ক্যালেন্ডার চলে এসেছে মানুষের হাতে। অথচ ইতিমধ্যেই ২০২৫ যেন জায়গা করে নিয়েছে এক ভয়াবহ বেদনা ও বিপর্যয়ের বছর হিসেবে। ধর্মীয় সমাবেশ, রেলস্টেশন, বিমানবন্দর, জনসভা, পর্যটনকেন্দ্র একটার পর একটা জায়গায় মৃত্যু আর হাহাকার। প্রশ্ন উঠছে, কোথায় ঘাটতি রয়ে গেল? প্রশাসনের প্রস্তুতিতে, না কি ভিড় সামলানোর চিরাচরিত ব্যর্থতায়?

মহাকুম্ভে শুরু, শেষের পথে নয়
বছরের শুরুতেই উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভ মেলায় ঘটে ভয়াবহ পদপিষ্টের ঘটনা। ২৯ জানুয়ারি মৌনী অমাবস্যার পুণ্যস্নানের দিনে ‘সঙ্গম নোজ’ এলাকায় লক্ষাধিক পুণ্যার্থীর ঢল নামে। বাঁধ ভাঙা জনস্রোত নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতায় মুহূর্তে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। সরকারি ও বেসরকারি হিসেব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ৩০ থেকে ৮০ ছাড়িয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রের দাবি। আহত দুই শতাধিক।

রাজধানীর রেলস্টেশনে মৃত্যু
মহাকুম্ভ ফেরত যাত্রীদের ঢলে ১৫ ফেব্রুয়ারি নিউ দিল্লি রেলস্টেশনেও পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। প্ল্যাটফর্ম ১৪ ও ১৫-তে অতিরিক্ত ভিড়, ট্রেন দেরি আর ঘোষণার বিভ্রান্তিতে কমপক্ষে ১৮ জনের মৃত্যু হয়। রাজধানীর বুকে এই ঘটনায় আবারও শোকাহত হয় গোটা দেশ।


আকাশ থেকে খসে পড়া তারার মতো নেমে এল মৃত্যু
১২ জুন আহমেদাবাদে ঘটে বছরের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ বিমান উড়ানের কিছুক্ষণের মধ্যেই তা ভেঙে পড়ে শহরের একটি মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলের ওপর। বিমানযাত্রী ও ক্রু মিলিয়ে ২৪০ জনের বেশি এবং মাটিতে থাকা অন্তত ১৯ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়। একমাত্র এক যাত্রী অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান।

উৎসবের জমায়েতেও নেমে আসে শোক
খেলার আনন্দও রক্ষা পায়নি। ৪ জুন বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে আইপিএল জয়ের আনন্দ মিছিলে ভিড় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে যেতেই প্রাণ হারান ১১ জন সমর্থক, আহত হন অর্ধশতাধিক।

সেপ্টেম্বরে ফের একই ছবি দেখা যায় তামিলনাড়ুর করুরে। অভিনেতা ও নব্য রাজনীতিবিদ বিজয়ের দলের জনসভায় পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ৪০ জনেরও বেশি মানুষের, যার মধ্যে একাধিক শিশু এবং নারীও ছিলেন।

বছর শেষেও আগুনে পুড়ল আলো ঝলমলে নাইটক্লাব
বছরের শেষে, ৬ ডিসেম্বর গোয়ার আরপোরা এলাকার এক নাইটক্লাবে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন। পর্যটন মরশুমে কানায় কানায় ভিড়ে ঠাসা এই ক্লাবে বেরোনোর সংকীর্ণ পথে দমবন্ধ হয়ে ও দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় অন্তত ২৫ জনের।

• দুর্ঘটনার পাশাপাশি বছরটিকে রক্তাক্ত করেছে সন্ত্রাসও:

পহেলগামে জঙ্গি হামলা
২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালায় জঙ্গিরা। ২৬ জন নিরস্ত্র ভারতীয় নাগরিকের মৃত্যু হয়। কাপুরুষের মতো এসে জঙ্গিরা আক্রমণ চালায় পর্যটকদের উপরে। যার প্রত্যাঘাতে ভারতীয় সেনা জঙ্গিদের উপর ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের অভিযান চালায়।

দিল্লি বিস্ফোরণ
পহেলগামে জঙ্গি হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই দিল্লিতে ঘটে বিস্ফোরণ। দিল্লির চাঁদনী চক এলাকায় ব্লাস্টে প্রাণ হারান ৯ জন, আহত হন অনেকে। তদন্তে নেমে সন্ত্রাসী যোগের ইঙ্গিত মেলে। তবে এই ক্ষেত্রে সন্ত্রাসীরা ছিলেন ভারতীয়। যা গোটা দেশের মনে আরও বিষাদ এনে দিয়েছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগও কেড়েছে বহু প্রাণ
২০২৫ সালে ভারতের উত্তরাঞ্চলের উত্তরাখণ্ড, কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ ও পাঞ্জাব রাজ্যে সংঘটিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যার মধ্যে প্রধানত ভারী বর্ষণজনিত বন্যা, ক্লাউডবার্স্ট, ফ্ল্যাশ ফ্লাড, ভূমিধসজনিত সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে মানুষের প্রাণহানির সংখ্যা কয়েক’শ অতিক্রম করে।

ফলে ২০২৫ যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে– ভিড় আছে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ নেই। উৎসব আছে, কিন্তু নিরাপত্তা নেই। উন্নয়ন আছে, কিন্তু প্রস্তুতি নেই।