মহারাষ্ট্রে ভোটের আগে চালু হয় ‘মুখ্যমন্ত্রী লাডকী বহিন যোজনা’। বাংলার লক্ষ্মী ভাণ্ডারের আদলে মহারাষ্ট্রে এই প্রকল্প চালু করার কথা ঘোষণা করে একনাথ শিন্ডে এবং দেবেন্দ্র ফড়নবিশের জোট সরকার। ওই প্রকল্পে মহিলাদের মাসে দেড় হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা বলা হয়। সেই প্রকল্পে এবার ধরা পড়ল ব্যাপক গড়মিল। মহিলা কল্যাণ প্রকল্পে বরাদ্দ বিপুল অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে।
বেহাত হয়ে গিয়েছে বিপুল পরিমাণের টাকা। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে চালু হয় এই প্রকল্প। মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোট শুরু হওয়ার ঠিক দু-তিন মাস আগে চালু হয় এই প্রকল্প। এই এক বছরের মধ্যেই লাডকী বহিন যোজনা প্রকল্প ঘিরে উঠছে দুর্নীতির অভিযোগ। অবাক করা বিষয় হল, মহিলাদের জন্য চালু হওয়া প্রকল্পে সুবিধা প্রাপকদের মধ্যে ১২ হাজার ৪৩১ জনই পুরুষ।
মহারাষ্ট্রের নারী ও শিশু কল্যাণ দপ্তর জানিয়েছে, গত এক বছরে ওই পুরুষ সদস্যদের ভাতা জোগাতে সরকারি কোষাগার থেকে ২৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। অনিয়ম নজরে আসতে পুরুষ সদস্যদের নাম বাতিল করা হয়েছে। এখনও স্পষ্ট নয় কীভাবে এই দুর্নীতির চক্র কাজ করেছে। ওই টাকা ব্যক্তি বিশেষের কাছে গিয়েছে নাকি কোনও চক্র হাতিয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। গোয়েন্দা তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার ভাবনাচিন্তা করছে মহারাষ্ট্র সরকার।
গত এক বছর ধরে শুধু পুরুষ সদস্যই নয়, নিয়ম বহির্ভূতভাবে ৭৭ হাজার ৯৮০ জন মহিলাও আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন। তাঁদের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে প্রায় ১৪৪ কোটি টাকা। এক বছরে ১৬৪ কোটির বেশি টাকা বেআইনিভাবে সরকারি তহবিল থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ উঠছে, সুবিধাভোগীদের মধ্যে ২ হাজার ৪০০ সরকারি কর্মচারী রয়েছেন। এই প্রকল্পে সরকারি কর্মচারী কিংবা কোনওভাবে সরকারের আর্থিক সুবিধা পান এমন কেউ আবেদন করতে পারেন না। ওই ২ হাজার ৪০০ সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে মহারাষ্ট্র সরকার সার্ভিস রুল মেনে তদন্ত শেষে পদক্ষেপ করবে বলে জানিয়েছে।
গত বছর মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটের আগে মহারাষ্ট্রের তৎকালীন একনাথ শিন্ড এবং বিজেপির জোট সরকার ওই প্রকল্প চালু করেছিল। প্রচারের খরচকে কেন্দ্র করে প্রকল্পটি নিয়ে তখনই বিতর্কের সূচনা হয়েছিল। তথ্য জানার অধিকার আইনে মহারাষ্ট্র সরকার জানায়, প্রকল্পটি প্রচারের জন্য ১৯৯ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে প্রচারে ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করা হয় বলে দাবি।
মহারাষ্ট্র সরকারের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী লাডকী বহিন যোজনার অধীন প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা করে পাচ্ছেন প্রায় দু’কোটি ৪১ লাখ মহিলা। প্রতি মাসে এই প্রকল্পের জন্য সরকারকে ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়। মহারাষ্ট্রের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী অদিতি নটকরে বলেন, কিছু দিন আগে এই প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের তালিকা খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছিল। তাতেই এই অনিয়ম ধরা পড়েছে। তদন্তের বিষয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান তিনি।