প্রেসক্রিপশন ব্যবস্থায় কড়া পদক্ষেপ স্বাস্থ্যদপ্তরের

প্রতীকী চিত্র

ত্রুটিমুক্ত ও নিরাপদ চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এবার আরও কড়া অবস্থান নিল রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন সংক্রান্ত একাধিক অনিয়মে রীতিমতো ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্যভবন। সাম্প্রতিক এক পর্যালোচনায় উঠে আসা গুরুতর ত্রুটির ভিত্তিতে গোটা রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলির জন্য নতুন নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় মাস ধরে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে প্রেসক্রিপশন অডিট চালানো হয়। সেই অডিটেই দেখা গিয়েছে, বহু ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের হাতের লেখা এতটাই অস্পষ্ট যে রোগী বা ফার্মাসিস্টদের পক্ষে প্রেসক্রিপশন পড়ে বোঝা কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠছে। এর ফলে ওষুধ সংক্রান্ত ভুল হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দপ্তর।

পর্যবেক্ষণে আরও জানা গেছে, জেনেরিক নাম ব্যবহারের পরিবর্তে বহু চিকিৎসক ওষুধের ব্র্যান্ড নেম লিখছেন। শুধু তাই নয়, বেশ কিছু প্রেসক্রিপশনে রোগীর অসুখ কী, সেই সংক্রান্ত স্পষ্ট তথ্য, প্রভিশনাল বা ক্লিনিক্যাল ডায়াগনসিস উল্লেখ করা হচ্ছে না। কোথাও কোথাও রোগীর শারীরিক অবস্থার বিবরণ অনুপস্থিত থাকছে, আবার অনেক প্রেসক্রিপশনে কোন চিকিৎসক রোগীকে দেখেছেন, তার পরিচয়ও স্পষ্ট নয়।
স্বাস্থ্য দপ্তরের মতে, ওষুধের ডোজ, কতদিন ও কতবার ওষুধ খেতে হবে, চিকিৎসার মেয়াদ কিংবা ওষুধ ব্যবহারের পদ্ধতি—এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিও বহু ক্ষেত্রে লেখা থাকছে না। ফলে রোগী চিকিৎসা সংক্রান্ত সঠিক নির্দেশনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে চিকিৎসা প্রক্রিয়ায়।


এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যভবনের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সমস্ত সরকারি হাসপাতালে প্রেসক্রিপশন স্পষ্টভাবে বড় হরফে ও ক্যাপিটাল লেটারে লিখতে হবে। ওষুধের ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড নেম নয়, বাধ্যতামূলকভাবে জেনেরিক নাম ব্যবহার করতে হবে। একই সঙ্গে রোগ নির্ণয়, চিকিৎসার সময়কাল, ডোজ ও চিকিৎসকের পরিচয় প্রেসক্রিপশনে উল্লেখ করা আবশ্যক বলে জানানো হয়েছে।

নির্দেশিকায় স্পষ্ট করা হয়েছে, রাজ্যের সর্বত্র সমস্ত সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে এই নিয়ম কার্যকর হবে। নির্দেশ অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ওষুধ সংক্রান্ত ভুল বিশ্বজুড়ে রোগীর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশনের কারণে ভুল ওষুধ বা ভুল মাত্রা গ্রহণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে দীর্ঘমেয়াদি রোগী ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে, যা প্রাণঘাতীও হতে পারে। স্বাস্থ্য দপ্তরের এই পদক্ষেপ চিকিৎসা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং রোগীর সুরক্ষা নিশ্চিত করার দিকেই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছে চিকিৎসক মহল।