ন্যাশনাল এপিলেপসি অ্যাওয়ারনেস ডে উপলক্ষে এপিলেপসি বা মৃগী সম্পর্কে সমাজের কুসংস্কার দূর করে বৈজ্ঞানিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ার বার্তা দিলেন বিশিষ্ট স্নায়ুবিশেষজ্ঞ ডা. সৌরভ হাজরা। প্রতি বছর ১৭ নভেম্বর পালিত হয় এই বিশেষ দিন। আর এ বছরের মূল ভাবনা ‘মাই এপিলেপসি জার্নি’। চিকিৎসকদের মতে, এপিলেপসি কোনও অভিশাপ নয়; এটি সম্পূর্ণ চিকিৎসাযোগ্য স্নায়বিক ব্যাধি। সময়মতো রোগ নির্ণয় ও নিয়মিত চিকিৎসা থাকলে অধিকাংশ রোগীই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে সক্ষম।
সিজার কী? কেন হয়?
ডা. হাজরার ব্যাখ্যায়, সিজার বা ফিটস মস্তিষ্কে এক ধরনের অতিরিক্ত বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের ফল। এতে রোগীর জ্ঞান হারানো, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেঁপে ওঠা, অথবা অস্বাভাবিক নড়াচড়া দেখা দিতে পারে। তিনি জানান, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে দু’বার বা তার বেশি অপ্ররোচিত সিজার হলে তাকে এপিলেপসি বলা হয়।’ রোগটি সম্পর্কে অজ্ঞতা ও ভুল ধারণাই আক্রান্তদের সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ফেলে।
ভারতে রোগের ব্যাপকতা
ভারতে এই রোগের ব্যাপকতা উল্লেখযোগ্য। বিশ্বে প্রায় ৬৫ মিলিয়ন মানুষ এপিলেপসিতে আক্রান্ত, যার বড় অংশই ভারতের নাগরিক। পশ্চিমবঙ্গে প্রতি এক লক্ষ জনে প্রতি বছর ৩৮ থেকে ৪২ জন এই রোগে আক্রান্ত হন। জন্মের সময় দেরিতে কান্না, বিকাশের অসুবিধা, মস্তিষ্কে সংক্রমণ, মাথায় আঘাত, রক্তে শর্করা বা সোডিয়ামের বড় পরিবর্তন—সবই গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি-কারক হিসেবে চিহ্নিত।
মিথ ও বাস্তব
এপিলেপসি নিয়ে বহু মিথ সমাজে ছড়িয়ে রয়েছে। কেউ মনে করেন এটি ছোঁয়াচে, কেউ মনে করেন অশুভ শক্তির প্রভাব। আবার অনেকে মনে করেন রোগীরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন না বা বিয়ে–সন্তান নেওয়া উচিত নয়। চিকিৎসকদের মতে, এ সবই ভুল ধারণা। ডা. হাজরা জানান, ‘জুতো বা লোহার গন্ধ দিলে সিজার থেমে যায়—এই ধারণা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক।’ বরং সঠিক ওষুধ, প্রয়োজনে সার্জারি এবং চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে চললেই রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
সিজারের সময় কী করবেন ও কী করবেন না
সিজারের সময় পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি। রোগীকে নিরাপদ জায়গায় শুইয়ে মাথার নিচে নরম কিছু রাখা, গলার টাইট জামা আলগা করা ও এক পাশে কাত করে দেওয়া—এসব করণীয়। তবে মুখে কিছু ঢোকানো, জোর করে চেপে ধরা বা সিজারের মাঝে ওষুধ দেওয়া মারাত্মক বিপজ্জনক।
চিকিৎসায় সম্ভাবনা
চিকিৎসকদের মতে, সঠিক চিকিৎসা পেলে প্রায় ৭০ শতাংশ রোগী সিজার-ফ্রি জীবনে ফিরতে পারেন। আধুনিক ধরণের সার্জারি এবং নতুন ওষুধ রোগ নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনা আরও বাড়িয়েছে। প্রায় এক-চতুর্থাংশ ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধও সম্ভব।
সমাজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
সমস্যার বড় অংশ সমাজের কুসংস্কার। অনেক রোগী লজ্জা বা ভয়ের কারণে চিকিৎসার পথে এগোতে পারেন না। চিকিৎসকরা জানান, পরিবার ও সমাজ পাশে থাকলে রোগী দ্রুত আগের জীবনে ফিরতে পারেন। ডা. হাজরা বলেন, ‘ন্যাশনাল এপিলেপসি ডে-র লক্ষ্য কুসংস্কার দূর করা। এপিলেপসি লুকিয়ে রাখার নয়, বুঝে নিয়ে এগোনোর নাম। সমাজ ও পরিবার সচেতন হলে একজন রোগীও স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারেন।’
ডা. সৌরভ হাজরার সচেতনতা বার্তা
ডা. হাজরা বলেন, ‘ন্যাশনাল এপিলেপসি ডে-র লক্ষ্য কুসংস্কার দূর করা, রোগীদের পাশে দাঁড়ানো এবং সময়মতো চিকিৎসার গুরুত্ব পৌঁছে দেওয়া। এপিলেপসি লুকিয়ে রাখার নয়, বুঝে এগিয়ে চলার নাম। পরিবার ও সমাজ সচেতন হলে একজন রোগীও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেন’।