ক্রমেই বাড়ছে হৃদরোগে মৃত্যুর হার, বিশ্বে প্রতি ৩ জনের মধ্যে ১ জনের মৃত্যু হৃদরোগে

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

লাইফস্টাইলের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলেছে হৃদরোগের সমস্যা। বিশ্বে প্রতি বছর যত সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয় তার মধ্যে সবথেকে বেশি মৃত্যু হয় হৃদরোগে। উদ্বেগের বিষয় হল, কোভিড পরবর্তী সময়ে মৃত্যুর ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হল স্ট্রোক আর হার্ট অ্যার্টাক।হার্ট ব্লকেজ থেকেই হয় হার্ট অ্যাটাক, যা এখন এক অন্যতম প্রধান সমস্যা। এক গবেষণা বলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৮০ সেকেন্ডে একজনের হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা ঘটছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য  সংস্থার তথ্যানুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঘাতক হৃদরোগ, মৃত্যুর হার ১৩ শতাংশ। ২০২৩ সালের রিপোর্ট বলছে, বিশ্বে প্রতি ৩ জনের ১ জনের মৃত্যু হয় কার্ডিওভাসকুলার রোগের কারণে।  
 
হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে এ দেশেও। ২০২৩-এ ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর একটি রিপোর্টের তথ্যানুযায়ী ভারতে প্রতিদিন সাডেন ডেথ-এ মৃত্যু হয়েছে ১৭৫ জনের। এঁদের মধ্যে প্রায় ১০০ জনেরই মৃত্যু কারণ হৃদরোগ। ২০০২এর সাডেন ডেথ-এর তুলনায় ২০২৩-এ এই সাডেন ডেথ-এ মৃত্যুর সংখ্যাও ঊর্দ্ধমুখী। ২০২২-এ ভারতে সাডেন ডেথ-এ মৃত্যু হয়েছে ৫৬ হাজার ৬৫৩ জনের। এর মধ্যে ৩২ হাজার ৪১০টি ঘটনা হার্ট অ্যাটাকের। ২০২৩-এ সাডেন ডেথ-এ মৃত্যু সংখ্যা ৬৩ হাজার ৬০৯, যার মধ্যে ৩৫ হাজার ৬৩৭টি হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা ঘটেছে। 
 
এনসিআরবি-র তথ্যানুযায়ী বেশ কিছু রাজ্যের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা অনেক বেশি। যেমন ওড়িশা ও পুদুচেরির মতো রাজ্যগুলিতে। বিশেষ করে ৪৫ থেকে ৬০ বছর বয়সের নাগরিকদের হার্ট অ্যাটাকের কারণে মৃত্যু ঘটেছে। এর পরেই রয়েছে ৩০ থেকে ৪৫ বছর বয়সের গ্রুপ। এনসিআরবি-র রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৯ থেকে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। তবে ২০২২ থেকে ২০২৩-এ মৃত্যুর হার আরও বেড়ে যায়। এই সময়ের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের কারণে মৃত্যু বেড়েছে ২৭ শতাংশ। প্রসঙ্গত,  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২ কোটি মানুষের। যা বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রায় ৩২ শতাংশ। 
 
হৃদরোগকে বার্ধক্যজনিত সমস্যা বলে মনে করা হলেও, এখন তরুণ বয়সেও হৃদরোগ এক মারাত্ম স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ইউরোপিয়ান সোসাইটি অফ কা্র্ডিওলজির ২০২৩-এর রিপোর্ট অনুযায়ী হার্ট অ্যাটাকে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মৃত্যু সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। পর্তুগালের গবেষক মারিয়ানা মার্টিনহো বলেছেন, যে সব মহিলারা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশান বা বুকে ব্যথায় কষ্ট পেয়ে থাকেন তাঁরাই বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। মহিলাদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে থাকাও খুব জরুরি। ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি অল্প বয়সীদের মহিলাদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতাও অত্যন্ত বেড়েছে। ফলে হার্ট সংক্রান্ত সমস্যাও বাড়ছে বলে তাঁর অভিমত। 
 
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এক জার্নালে প্রকাশ, এই ফর্টিস এসকর্ট হার্ট ইনস্টিটিউট-ওখলা, দিল্লির ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলডজির ডিরেক্টর নিশীথ চন্দ্র এক গবেষণায় বলেছেন, ‘ঋতুস্রাবের সময় মহিলাদের শরীরে ইস্ট্রোজেন সক্রিয় থাকে, ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও কম। কিন্তু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমরা হার্ট অ্যাটাকের কোনও উপসর্গ অবহেলা করতে পারি না।’   
 
চিকিতসকেরা জানাচ্ছেন, ধূমপান মহিলা ও পুরুষদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে যেসব মহিলা ধূমপান করেন তাঁদের হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা পুরুষদের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি। এছাড়াও জন্ম নিয়ন্ত্রণের ওষুধ রক্তচাপ বাড়িয়ে তুলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে, একটি গবেষণায় এমনই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। কারণ বেশিরভাগ মহিলাই জন্ম নিয়ন্ত্রক ওষুধ খাওয়ার আগে রক্তচাপ পরীক্ষা করেন না ।
 
এর পাশাপাশি স্থূলতা, টানা বসে কাজ, অনুপযুক্ত খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক শ্রমের অভাব ডায়াবেটিসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ডায়াবেটিসের হাত ধরে আসে হার্টের অসুখ। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৩০ বছরের কম বয়সের ভারতীয়দের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা ১১.২ শতাংশ।  
 
হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন কার্ডিয়াক সার্জন দেবী শেঠি। ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম, অ্যাঞ্জিওগ্রামের মতো পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চার উপরও জোর দিয়েছেন তিনি। এক সর্বভারতীয় সংবাদ তিনি বলেছেন, ‘প্রতিদিন অন্তত ১০ হাজার পদক্ষেপ হাঁটুন। এতে হৃদযন্ত্র, কিডনি, লিভার. ও মস্তিষ্ক সুস্থ থাকবে।’ তাঁর আরও পরামর্শ, ‘ওজন কমাতে ডায়েট ও ব্যায়ামের দিকে মন দিন। শুধুমাত্র চরম পরিস্থিতিতেই ওজন কমানোর ওষুধ নেওয়া উচিত, এবং অবশ্যই চিকিতসকের পরামর্শে।’