হার্ট অ্যাটাক মানেই মৃত্যু নয়, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

আগে মনে করা হাত হার্ট অ্যাটাক একটা বয়েসের পরই হয়।  সাধারণত ৫০-এর পরের বয়সকেই হৃদয় রোগে আক্রান্ত হওয়ার সময় হিসেবে ধরা হাত। পাশাপাশি বদ্ধমুল ধারণা ছিল হৃদয় রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যু অনিবার্য। কিন্তু বর্তমানে এই ধারণা বদলেছে। বিজ্ঞান বলছে যে কোনও বয়েসে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে পারেন। দেখা গিয়েছে, বছর ৮-এর শিশুও হৃদয় রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

এছাড়া বিজ্ঞান আরও বলছে, হার্ট অ্যাটাক মানেই মৃত্যু নয়। কারণ হার্ট  অ্যাটাক এবং হার্ট ফেলিওর দু’টি কিন্তু এক নয়। যদিও উভয়ই হার্টের সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুতর অসুস্থতা, তাদের কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসার পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই দু’টি অবস্থার মূল পার্থক্য বোঝা জরুরি, কারণ সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ জীবন বাঁচাতে পারে। পরিস্থিতি-দৈহিক অবস্থার উপর নির্ভর করছে সেরে ওঠার চান্স।

মার্কিন গবেষণা সংস্থা দ্য জন্স হোপকিং হাসপাতাল জানাচ্ছে, হার্ট অ্যাটাক হয়েছে শুনেই ভেবে বসলেন এবার মৃত্যু হবে তা কিন্তু ঠিক নয়।  আগে জানতে হবে হার্ট অ্যাটাক নাকি হার্ট ফেলিওর হয়েছে।  এই দু’টি শব্দ প্রায়শই সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। হার্টের পেশিগুলিতে রক্ত সরবরাহকারী প্রধান ধমনী (করোনারি আর্টারি) সম্পূর্ণরূপে বা আংশিকভাবে অবরুদ্ধ হয়ে যায়, তখন হার্ট অ্যাটাক হয়।


সাধারণত ধমনীতে চর্বি জমার কারণে তৈরি হওয়া প্লাক ফেটে গিয়ে রক্ত জমাট বাঁধার ফলে ঘটে। রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে হার্টের পেশির সেই অংশ অক্সিজেনের অভাবে মারা যেতে শুরু করে। অন্যদিকে হৃদয় যখন  শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত রক্ত পাম্প করতে পারছে না। তখন হয় হার্ট ফেলিওর।  হার্ট অ্যাটাক হোক বা ফেলিওর, দু-ক্ষেত্রেই যদি সময় মত এবং সঠিক চিকিৎসা নেওয়া হয় তাহলে বেঁচে যাওয়ার চান্স অনেক বেশি।

গবেষকরা বলছেন,  সর্ব প্রথম আমাদের জানতে হবে দু-ক্ষেত্রেই কারণ এবং লক্ষণ।  হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট ফেলিওরের পেছনের কারণ হল, ধমনীর ভিতরে চর্বি, কোলেস্টরল এবং অন্যান্য পদার্থের প্লাক জমা হওয়া।  এই প্লাক ফেটে গিয়ে রক্ত জমাট বাঁধা, যা রক্তনালিকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়। সাধারণত বুকে তীব্র ব্যথা বা চাপ ভাব অনুভব করলে বা যদি দেখা যায় বুক থেকে বাম হাত, ঘাড়, চোয়াল বা পিঠে সেই ব্যথা ছড়িয়ে পড়েছে তাহলে ধরে নিতে হবে এটি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ।  এরপরে ধাপটি হল– শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব বা বমি, ঠান্ডা ঘাম, মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ও অত্যন্ত দুর্বল অনুভব করা এর অন্যতম লক্ষণ।

অন্যদিকে হার্ট ফেলিউরের ক্ষেত্রে হার্ট ফেলিওর সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা। এই অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হার্টের পেশি দুর্বল বা শক্ত হয়ে যেতে পারে, যার ফলে এটি কার্যকরভাবে রক্ত পাম্প বা গ্রহণ করতে অক্ষম হয়। এর পেছনের কারণ হল– পূর্ববর্তী হার্ট অ্যাটাক, যা হার্টের পেশিকে দুর্বল করে দেয়। উচ্চ রক্তচাপ, যা হার্টের উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে। ডায়াবেটিস। হার্টের ভালভের সমস্যা অ্যারিদমিয়া (অনিয়মিত হৃদস্পন্দন)। বেশ কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগ।

এবার প্রশ্ন হল হার্ট ফেলিওর হয়েছে তা বুঝবেন কীভাবে ? শুধু কাজকর্মের সময় নয়, বিশ্রামকালে শ্বাসকষ্ট, বিশেষ করে শুয়ে থাকলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া।  পা, গোড়ালি এবং পেটে তরল জমা কারণে ফোলাভাব। ক্লান্তি এবং দুর্বলতা। নিয়মিত কাশি বা বুকে কফ জমা। দ্রুত ওজন বৃদ্ধি। পাশাপাশি খিদে কমে যাওয়া, বমি বমি ভাব। হার্ট ফেলিওরের চিকিৎসা সাধারণত জীবনযাত্রার পরিবর্তন, ওষুধের মাধ্যমে লক্ষণ নিয়ন্ত্রণ এবং হার্টের কার্যকারিতা উন্নত করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। কিছু ক্ষেত্রে, পেসমেকার, ডিফিব্রিলেটর বা গুরুতর পরিস্থিতিতে হার্ট প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হতে পারে।

এবার জানিয়ে রাখি, হার্ট অ্যাটাক ফেলিওরের থেকেও মারাত্মক।  এক্ষেত্রে অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন। সময়মতো চিকিৎসা না পেলে হার্টের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে বা রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। চিকিৎসা পদ্ধতিতে সাধারণত রক্তনালি খুলে দেওয়া (অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি) বা বিকল্প রক্তনালি তৈরি করা (বাইপাস সার্জারি) এবং ওষুধ ব্যবহার করা হয়।