চিকিৎসাবিজ্ঞানে যুগান্তকারী সাফল্য, বিশ্বের সবচেয়ে ছোটো পেসমেকার

বিশ্বের সবথেকে ছোটো পেসমেকার। যন্ত্রটি চালের দানার মতো। সম্প্রতি এই যন্ত্র তৈরি করে সাফল্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই পেসমেকারের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল, এটি স্থায়ী নয়। শরীরে নির্দিষ্ট কাজ শেষ হওয়ার পর মানবদেহের ভেতরে নিজে থেকেই গলে যায়। আলাদা করে অপারেশন করে বার করতে হয় না। অন্যান্য পেসমেকারের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করে পেসমেকার বসাতে হয়। প্রয়োজনে পরে যন্ত্রটি খুলে ফেলতে ফের অস্ত্রোপচার করতে হয়।
সাধারণত পেসমেকার বসাতে হলে অস্ত্রোপচার করতে হয়। অনেক সময় কয়েক মাস বা কয়েক বছর পরে আবার অস্ত্রোপচার করে সেই যন্ত্র খুলে ফেলতে হয়। এতে রোগীর কষ্ট হয়। সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। চিকিৎসার খরচও অনেক হয়। নতুন এই ছোটো পেসমেকার সেই সব সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে। এই ছোটো পেসমেকারটি মূলত অস্থায়ী সাহায্যের জন্য তৈরি করা হয়েছে। হার্ট অ্যাটাক বা হার্টের বড় কোনও অস্ত্রোপচারের পর অনেক সময় হৃদযন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।
তখন কিছুদিনের জন্য হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণের জন্য সাহায্যের দরকার হয়। এই ছোটো পেসমেকারটি হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কিছুদিন পর রোগীর হৃদযন্ত্র ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলে এবং স্বাভাবিক ছন্দে ফিরলে তখন আর পেসমেকারের দরকার পড়ে না। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে এই যন্ত্রটি ধীরে ধীরে ভেঙে গিয়ে শরীরের ভেতর শোষিত হয়ে যায়। এতে শরীরের কোনও ক্ষতি হয় না বা কোনও ক্ষতিকর জিনিস থেকে যায় না। এই নতুন যন্ত্রের আবিষ্কারের ফলে রোগীর অনেক সুবিধা হবে। এই যন্ত্র রোগীর শরীরে ব্যবহার করা হলে দ্বিতীয়বার অপারেশনের প্রয়োজন পড়বে না, সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক কমবে এবং রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।
আকারে ছোটো হলেও এই পেসমেকারটি অত্যন্ত নির্ভুলভাবে কাজ করে। এই যন্ত্র ঠিক সময়ে হৃদযন্ত্রে বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠায় যাতে হৃদস্পন্দন ঠিক থাকে। জরুরি মুহূর্তে এটি রোগীর জীবন বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি মিনিমালি ইনভেসিভ চিকিৎসা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটা বড় অগ্রগতি। ভবিষ্যতে এমন আরও যন্ত্র তৈরি হতে পারে। এই ধরনের যন্ত্র শরীরের ভেতরে ঢুকে প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করবে এবং কাজ শেষ হলে নিজে থেকেই চলে যাবে। এই যন্ত্র শরীরের উপর চাপ তৈরি করবে না, বরং শরীরের সঙ্গে মিশে রোগীকে সুস্থ করে তুলবে। কাজ হয়ে গেলে নিঃশব্দে শরীর থেকে বিদায়ও নেবে।