চতুর্থ দফায় দেশে ভোট শান্তিতে, রাজ্যে অশান্তি

২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফায় ভোট দিচ্ছেন এক মহিলা (Photo: IANS)

উত্তরপ্রদেশের সমস্যা জর্জরিত বুন্দেলখণ্ড অঞ্চল সহ হিন্দি বলয়ের ৫৯টি কেন্দ্রে কঠিন পরীক্ষার মুখে নরেন্দ্র মােদির দল। সােমবার চতুর্থ দফায় ভোটগ্রহণ হল ৭২টি লােকসভা কেন্দ্রে।

রাজনৈতিক মহলের মতে, এই লােকসভা আসনগুলি জিততে পারলেই সপ্তদশ লােকসভা নির্বাচনে লড়াইয়ে কোনওমতে টিকে থাকতে পারবে বিজেপি। আর তা না হলে, আজই হয়তাে ঠিক হয়ে গেল বিজেপি তথা এনডিএ সরকারের ভবিষ্যৎ। বুন্দেলখণ্ডের ১৩টি আসনে (মূলত কৃষিপ্রধান অঞ্চল) সােমবার ভােটগ্রহণ হয়।

গত ৩ দফা ভােটের অনুপাতে এবার রেকর্ড ভাঙার আবেদন জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি। প্রধানমন্ত্রী আজ ভােটারদের উদ্দেশ্যে টুইটে লিখেছেন, ‘সাধারণ নির্বাচনের আরও একটা দফার ভােট গ্রহণ শুরু হল। এ দফায় সবচেয়ে বেশি ভােট পড়ার আশা করছি। গত ৩ দফার ভােটের রেকর্ড ভেঙে যাবে। নতুন ভােটাররা স্বতঃস্ফুর্তভাবে ভােট দিন।’


উত্তর ভারতের রাজনৈতিক পর্যালােচকরা মনে করছেন, নির্বাচনের ক্ষেত্রে একাধিক বিষয় নিয়ে কার্যত কোণঠাসা নরেন্দ্র মােদি হিন্দি বলয়ে ঘুরে দাড়ানাের চেষ্টা করনে অক্ষয় কুমারের নেওয়া সাক্ষাৎকারটিকে ভর করেই। ওই অরাজনৈতিক সাক্ষাৎকারটিতে প্রধানমন্ত্রী প্রাণপণে চেষ্টা করেছিলেন নিজের দারিদ্র, লড়াই-সংগ্রামের কথা বলে তাঁর দিকে সহানুভূতির হাওয়া টানতে।

কিন্তু তাতে আদৌ কতটা লাভ হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিজেপি মহলেই। কারণ উত্তরপ্রদেশের ১৩টি আসনই বুন্দেলখণ্ড অঞ্চলে এবং এই অঞ্চলের রাজনেতিক কর্তৃত্ব কার্যত সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টির দখলে। এই দুটি দল এবার জোট বেধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ফলে এই আসনগুলি থেকে একটি আসনও বিজেপির দিকে যে যাচ্ছে না, তা মােটামুটি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও বুঝতে পেরেছেন। এছাড়াও কানপুর এবং ফারুকাবাদেও আজ ভােট হয়।

সােমবার সকাল থেকেই ৯’টি রাজ্যের ৭২টি আসনে ৯৫৭ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হল। ভােট দিয়েছেন ১২ কোটিরও বেশি ভােটার। আজকের প্রার্থীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতানেত্রী থাকলেও দিনভর সবচেয়ে বেশি আলােচনার কেন্দ্রে রইলেন বেগুসরাইয়ের সিপিআই প্রার্থী কানহাইয়া কুমার।

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রনেতা ছাড়াও আজকের ভােটে ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মিলিন্দ দেওরা (কংগ্রেস), অখিলেশ যাদবের স্ত্রী ডিম্পল যাদব (সমাজবাদী পার্টি), কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় (বিজেপি), গিরিরাজ সিং, উর্মিলা মাতন্ডকর (কংগ্রেস), অভিনেত্রী মুনমুন সিং (তৃণমূল কংগ্রেস), অধীর চোধুরি (কংগ্রেস) সহ আরও অনেকের।

সােমবার বিহারের ৫ টি, ঝাড়খণ্ডের ৩টি, মধ্যপ্রদেশের ৬টি, মহারাষ্ট্রের ১৭টি, ওড়িশার ৬টি, রাজস্থানের ১৩টি, উত্তরপ্রদেশের ১৩টি এবং পশ্চিমবঙ্গের ৮টি আসনে ভােটগ্রহণ হয়। কাশ্মীরের অনন্তনাগেরও কয়েকটি জায়গায়। ভোটগ্রহণ হয়েছে। নিরাপত্তার কারণেই এখানে ৩ দফায় ভোট হচ্ছে। ২৩ এপ্রিল অনন্তনাগের কয়েকটি আসনে ভােট নেওয়া হয়েছিল।

সােমবার যে কেন্দ্রগুলিতে ভােট হয়েছে, গত লােকসভা নির্বাচনে তার মধ্যে ৫৬ টিতেই জিতেছিল বিজেপি। কংগ্রেসের দখলে ছিল দু’টি আসন। কিন্তু গত প্রায় দু’বছর ধরে মহারাষ্ট্র, রাজস্থান সহ হিন্দি বলয়ের একাধিক জায়গায় উত্তাল কৃষক বিক্ষোভের পরে পরিস্থিতি অনেকটাই বিজেপির হাত থেকে সরে এসেছে। এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধুঁকছে কৃষি সমস্যায়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছে এই কৃষক ক্ষোভ আছড়ে পড়তে পারে ইভিএমে। কানহাইয়া কুমারের বিপরীতে গিরিরাজ সিং ছাড়াও লড়াইয়ে রয়ছেন রামবিলাস পাসােয়ান এবং উপেন্দ্র কুশাওয়াও।

ঝাড়খণ্ডের তিনটি আসনে লড়ছেন ৫৯ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে আছেন দু’জন মহিলা। এই রাজ্য থেকেই প্রার্থী হয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্র সুদর্শন ভগত। মধ্যপ্রদেশে ৬টি আসনের জন্য লড়ছেন ১০৮ জন প্রার্থী। ১০ জন মহিলা রয়েছেন এই প্রার্থী তালিকায়। হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন কমলনাথের ছেলে নকুলনাথ।

মহারাষ্ট্রের ১৭ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৮৬৩ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে মহিলা রয়েছে ৭৫ জন। হেভিওয়েট থাহীদের মধ্যে রয়েছেন প্রান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মিলিন্দ দেওরা, সুনীল দত্তের কন্যা প্রিয়া দত্ত, পার্থ পাওয়ার প্রমুখ।

রাজস্থানের ১৩ টি আসনের জন্য লড়াই করছেন ১২১ জন প্রার্থী। মহিলার সংখ্যা ৭ জন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি পি চোধুরি, গজেন্দ্র সিংয়ের পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন অশােক গেহলটের পুত্র বৈভব গেহলট।

উত্তরপ্রদেশের ১৩টি আসনের জন্য লড়াই হয়েছে ১৪২ জন প্রার্থীর মধ্যে। এদের মধ্যে মহিলা প্রার্থী আছেন ১৮। লড়াইয়ে রয়েছেন অখিলেশের স্ত্রী ডিম্পল যাদব, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সলমন খুরশিদ সহ আরও কয়েকজন। গতবার বিরােধীদের মধ্যে একমাত্র ডিম্পলই জিতেছিলেন কনৌজ থেকে।

এদিকে, পশ্চিমবঙ্গে ৮টি কেন্দ্রে চতুর্থদফায় ভোট গ্রহণের সময় বীরভূম, বহরমপুর ও আসানসোলে অশান্তির খবর পাওয়া গিয়েছে।