অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর পরীক্ষাগার উত্তরাখন্ডই 

দিল্লি, ২৯ জুন– প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রবিবার ভুপালের সভায় দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার পক্ষে সওয়াল করার পর থেকে এই ব্যাপারে দেশ জুড়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক তৎপরতা তুঙ্গে উঠেছে। নড়েচড়ে বসেছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি। বিজেপি সূত্রের খবর, আগামী লোকসভা ভোটের আগে উত্তরাখণ্ডে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার ভাবনা আছে। এই বিষয়ে রাজ্য সরকার গঠিত কমিটি আগামী দিন পনেরোর মধ্যে রিপোর্ট জমা করবে বলে রাজ্য সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে।

লোকসভা নির্বাচনের এখনও মাস দশেক বাকি আছে। তার আগেই মোদি ঘোষিত অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর পরীক্ষাগার হিসেবে ছোট পাহাড়ি রাজ্য উত্তরাখণ্ডকে করার পরিকল্পনা নিয়ে এগচ্ছে বিজেপি । এখনই ওই ছোট রাজ্য নয়া ব্যবস্থা চালু করে এর ভাল দিকগুলি দেশবাসীর কাছে প্রচার করা যাবে। উত্তরাখণ্ডকে বেছে নেওয়ার কারণ হল  এখানকার জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ মুসলিম। গোটা রাজ্য ছড়িয়ে আছে সংখ্যালঘু জনসংখ্যা। দেওয়ানি বিধিকে কেন্দ্র করে ওই রাজ্যে বড় ধরনের প্রতিবাদের সম্ভাবনা কম বলেও মনে করছে পদ্ম শিবির। 

গত মাসে আইন কমিশন বিজ্ঞপ্তি জারি করে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে মতামত চেয়েছে দেশবাসীর। যদিও বিগত আইন কমিশন এই বিষয়টিকে ক্লোজড চ্যাপ্টার ঘোষণা করে ২০১৮ সালে রিপোর্ট দিয়েছিল। আচমকা বর্তমান আইন কমিশন নতুন করে দেওয়ানি বিধির বিষয়টি আলোচনায় ফিরিয়ে আনার পর গত রবিবার থেকে তা তুঙ্গে উঠেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মুখ খোলার পর। ভুপালে বিজেপির সভায় প্রধানমন্ত্রী ‘এক দেশ এক আইন’ ভাবনার পক্ষে সওয়াল করেন। তোলেন অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রসঙ্গ।


এর অর্থ দেশে বিভিন্ন ধর্ম, ভাষা ও জাতি গোষ্ঠীর জন্য পৃথক ব্যক্তিগত আইন আর থাকবে না। বর্তমানে পারসোন্যাল ল বা ব্যক্তিগত আইনের বিধানে দেশের বিচার বিভাগও মান্যতা দিয়ে থাকে। সরকারিভাবে বিয়ের বয়স নির্ধারণ করা থাকলেও মুসলিম, খ্রিস্টান এবং আদিবাসীদের বেশ কিছু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সামাজিক বিধান অনুসরণের সুযোগ আছে। দত্তক নেওয়া, সম্পত্তির অধিকার, একাধিক বিয়ে ইত্যাদি ক্ষেত্রেও ভিন্ন বিধান চালু আছে।

মোদি সরকার ইতিমধ্যে তিন তালাক ব্যবস্থাকে আইন করে নিষিদ্ধ করেছে। তার আগে সুপ্রিম কোর্ট তিন তালাক ব্যবস্থাকে অমানবিক, অসাংবিধানিক বলে রায় দেয়। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার সাংবিধানিক বিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বিলোপও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকরের আর একটি পদক্ষেপ ছিল মোদি সরকারের।

তবে ব্যক্তিগত আইনের অন্য অনেক বিষয় আছে যেগুলির ব্যাপারে ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী আপোসে নারাজ। স্বভাবতই স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদি অভিন্ন বিধির পক্ষে সওয়াল করায় পক্ষে-বিপক্ষে সব মহলই সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোন্যাল ’ল বোর্ড বুধবার এক দফা বৈঠক করেছে। তারা ফের ৪ জুলাই দেশের সব রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে লখনউয়ে বৈঠক করবে। কেরলের ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন অফ মুসলিম লিগও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বুধবার বৈঠক করেছে। আইন কমিশনকে কী বলা হবে তা নিয়েও আলোচনা চালাচ্ছে সংগঠনগুলি।

তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি খুব বেশি সরব হয়নি। আম আদমি পার্টি এই ব্যাপারে মোদি সরকারের পাশে থাকার কথা বললেও দলের প্রথমসারির কোনও নেতা মুখ খোলেননি। কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা পি চিদম্বরম ব্যক্তিগত আইনে রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করতে পারে না বলে মত দিলেও দলগতভাবে কংগ্রেস কিছু জানায়নি।

আসলে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়ন বিজেপির একেবারে গোড়ার কর্মসূচি। অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের পথ খুলে যাওয়া এবং কাশ্মীর সংক্রান্ত সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের পর বিজেপি এবার সারাদেশেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকরকে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে হাতিয়ার করতে চাইছে বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত।