রাষ্ট্রদ্রোহ আইন নিয়ে কেন্দ্রের আর্জি নস্যাৎ, সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চে গেল মামলা

সুপ্রীম কোর্ট (File Photo: AFP)

দিল্লি, ১২ সেপ্টেম্বর –ব্রিটিশ জমানার রাষ্ট্রদ্রোহ আইন বদলে তা নতুন করে চালু করতে চাইছে কেন্দ্র। এই বছরই মে মাসে শীর্ষ আদালতে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‘ঔপনিবেশিক আইনের রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের ধারা এবং সাজার বিধান পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে।’ বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য সংবিধানিক বেঞ্চে পাঠিযেছে শীর্ষ আদালত। শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হলেও প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ তা খারিজ করে দেয়। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ‘অন্তত পাঁচ বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত সংবিধান বেঞ্চ বিষয়টির সাংবিধানিক বৈধতা যাচাই করবে।’
ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪ ধারা-সহ রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের আওতায় থাকা যাবতীয় ধারাগুলিকে পরীক্ষা করে পরিবর্তন করতে চাইছে কেন্দ্র। প্রক্রিয়াটি এখনও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। পরিবর্তন হলে ঔপনিবেশিক আমলের আইনের বিধানগুলি প্রয়োজনীয় বদল করা হবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা গত ১১ অগাস্ট বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে তিনটি বিল পেশ করেন লোকসভায়। এই বিল সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে পাঠানো হয়।

প্রস্তাবিত নতুন বিলে উল্লেখ রয়েছে, ভারতের সার্বভৌমত্ব, একতা এবং অখণ্ডতাকে যদি কেউ বিপন্ন করে তাহলে উপযুক্ত শাস্তি হবে। সেই বিল কার্যক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক আমলের রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের তুলনায় অনেক বেশি ‘আগ্রাসী’ বলে ইতিমধ্যেই অভিযোগ উঠেছে। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, নয়া পরিস্থিতিতে পুরো বিষয়টি নতুন ভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ সেই বিচার করবে।
 
ব্রিটিশ জমানার রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের বদলে নয়া বিধান আনার বিষয়টি সম্প্রতি ঘোষণা করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং সিআরপিসির বদলে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বিল, ২০২৩ পেশ করা হয়েছিল সংসদে। এরই মাঝে এবার রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের বিরোধিতায় দায়ের মামলাগুলি যেতে চলেছে বৃহত্তর সাংবিধানিক বেঞ্চের কাছে।
ভারতীয় দণ্ডবিধির যে ১২৪এ ধারা রাষ্ট্রদ্রোহকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে, সেই ধারার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একাধিক আবেদন জমা পড়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। বর্তমানে এই আইনটি স্থগিত রয়েছে। এই আইনের অধীনে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। তবে এই আইনটি এখনও বাতিল হয়নি। এই আবহে এই সংক্রান্ত মামলা যাতে বৃহত্তর বেঞ্চের কাছে না পাঠানো হয়, কেন্দ্রের তরফে শীর্ষ আদালতের কাছে সেই আর্জি জানানো হয়েছিল। তবে কেন্দ্রের সেই আর্জিতে আমল দিল না আদালত।
মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতের রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেওয়া হয়, রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের বিরোধিতায় জমা পড়া আবেদনগুলি যাতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের কাছে পাঠানো হয়। যাতে তিনি এই মামলাটিকে পাঁচ সদস্যের সাংবিধানির বেঞ্চের কাছে পাঠাতে পারেন। এর আগে এই আইন নিয়ে পর্যালোচনার সময় আইন কমিশন প্রস্তাব দিয়েছিল যে এই আইনে কিছু বদল আনা উচিত। তবে তা বাতিল যেন না করা হয়।
এর আগে ২০২২ সালের মে মাসে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন স্থগিত করে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, যতদিন ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪এ ধারার বৈধতা নিয়ে পুনর্বিবেচনা প্রক্রিয়া চলছে ততদিন যেন রাজ্য বা কেন্দ্র এই আইনে কারও বিরুদ্ধে মামলা রুজু না করে। সেইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, যাঁরা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় জেলবন্দি আছেন বা মামলা চলছে, তাঁরা নিজেদের বক্তব্য নিয়ে ট্রায়াল কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন। এই মর্মে সব রাজ্যের মুখ্য সচিবকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল।
এদিকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪এ ধারার বদলে নয়া ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বিলে ১৫০ নং ধারা আনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এই সংহিত বিল ইতিমধ্যেই লোকসভায় পেশ হয়েছে। নয়া বিলের ১৫০ নং ধারায় বলা হয়েছে, কেউ জেনে বুঝে যদি মৌখিক ভাবে বা লিখিত ভাবে দেশের অখণ্ডতারে ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করে। বা কেউ আর্থিক মদত দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত হানে বা বিচ্ছিনাবাদে পরোক্ষ বা সরাসরি যুক্ত থাকে তাহলে আজীবন কারাবাসের সাজা শোনানো হবে। প্রয়োজনে সেই সাজার মেয়াদ ৭ বছর বাড়িয়ে দেওয়া হবে। সঙ্গে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হবে।