দেশের নাম ‘ইন্ডিয়া’ থেকে ‘ভারত’ !  সংসদের বিশেষ অধিবেশন ঘিরে জল্পনা   

দিল্লি, ৫ সেপ্টেম্বর – সংসদের বিশেষ অধিবেশন নিয়ে জল্পনা ফের নতুন দিকে মোড় নিল। জি-২০ সম্মেলন উপলক্ষে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে এক নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণপত্রে ইংরাজি ভাষায়, ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’র পরিবর্তে লেখা রয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’। রাষ্ট্রপতির এই আমন্ত্রণপত্রের পরই রাজধানীর রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা তুঙ্গে। জল্পনা চলছে, সংবিধানে দেশের নাম ‘ইন্ডিয়া’ থেকে ‘ভারত’ করার জন্য সংসদের বিশেষ অধিবেশনে রেজোলিউশন আনতে পারে সরকার। এই সম্ভাবনাকে ঘিরেই এখন রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর চর্চা।
বিরোধী দলগুলির জোটের নাম ইন্ডিয়া রাখার পর থেকে এই বিতর্কের সূচনা হয়েছে। এবার, আসন্ন জি ২০ শীর্ষ সম্মেলনকে ঘিরেও এই বিতর্ক উসকে উঠল। এই নিয়ে কেন্দ্র তথা বিজেপিকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি কংগ্রেসের মিডিয়া প্রধান জয়রাম রমেশ।কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ টুইট করে লেখেন, এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরে আঘাত। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘তা হলে যেটা শুনেছিলাম, সেটাই সত্যি! আগামী ৯ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি ভবনে জি২০ নেতাদের নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে লেখা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’, অথচ চিরাচরিত ভাবে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ লেখা হয়ে আসছে।’’ আরও লেখেন, “সংবিধানের ২ নং অনুচ্ছেদে সাফ বলা রয়েছে, ‘ভারত অর্থাৎ ইন্ডিয়া, রাজ্যের সমষ্টি হিসেবে বিবেচিত হবে’। কিন্তু সেই যুক্তরাষ্ট্রের উপরই আঘাত হানা হচ্ছে।”  প্রসঙ্গত, সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদে লেখা আছে: ‘ইন্ডিয়া, অর্থাৎ ভারত, একটি যুক্তরাষ্ট্র।’
অসমের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং বিজেপি সাংসদ হরনাথ সং যাদব এর পাল্টা টুইট করেন।এদিন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা টুইট করে লেখেন, “রিপাবলিক অব ভারত – আমি খুশি এবং গর্বিত যে আমাদের সভ্যতা সাহসের সঙ্গে অমৃতকালের দিকে এগিয়ে চলেছে।” অন্যদিকে, সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে বিজেপি সাংসদ হরনাথ সিং যাদব জানিয়েছেন, ভারতের সংবিধান প্রণেতারা সংবিধানে দুটি শব্দ রেখে ‘ভুল’করেছেন। তিনি বলেন, অক্সফোর্ড অভিধানে ‘ইন্ডিয়া’কে গরিব ও অশিক্ষিত মানুষের দেশ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, ইংরেজরা তাদের ‘দাসত্বে’ থাকা দেশগুলিকে ‘ইন্ড’ বা ‘ইন্ডিয়া’ শব্দ দিয়ে চিহ্নিত করত। দাবির পক্ষে তিনি যুক্তি দিয়েছেন, ইন্দোনেশিয়া বা ইন্ডিয়ানার কাছাকাছি তো সিন্ধু নদী ছিল না, তাহলে এই জায়গাগুলির সঙ্গে ইন্ড শব্দ কীভাবে যুক্ত হল? দুই বিজেপি নেতার এই বক্তব্যের পরই আসন্ন বিশেষ অধিবেশনে দেশের নাম বদলানোর বিষয়ে একটি রেজোলিউশন আসতে পারে বলে চর্চা শুরু হয়েছে ।
এই পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতির আয়োজনে জি ২০ বৈঠকে একটি নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে যা লেখা হল, তা নিয়ে দেশের নামবদলের জল্পনা আরও গতি পেয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, আসন্ন বিশেষ অধিবেশনে কি এই সংক্রান্ত প্রস্তাব পেশ করতে চলেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার?
কংগ্রেসের এই আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গেই আরও একটি জল্পনা শুরু হয়েছে। তা হল, সংসদের আসন্ন বিশেষ অধিবেশনে কি দেশের নাম ইন্ডিয়া থেকে সব ভাষাতেই ভারত করার প্রস্তাব আনতে চলেছে মোদি  সরকার ? বিশেষ অধিবেশন কী কারণে তা এখনও কারও কাছেই স্পষ্ট নয়। অনেকের দাবি, ‘এক দেশ এক ভোট’ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিল আনা হতে পারে। অনেকে মনে করছেন মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ হতে পারে। এই প্রেক্ষিতেই জি ২০ নেতাদের নৈশভোজে আমন্ত্রণের চিঠিতে ভারতের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণপত্র ঘিরে নতুন জল্পনা দানা বাঁধতে শুরু করেছে। যদিও এই বিষয়ে নীরব সরকার।  

প্রসঙ্গত, বিজেপি বিরোধী দলগুলি যে জোট তৈরি করেছে তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’। তাতে কংগ্রেস, তৃণমূল, শিবসেনা উদ্ধব শিবির, এনসিপি, এসপি, জেডিইউ, ডিএমকের মতো একাধিক বিজেপি-বিরোধী দল রয়েছে। প্রথমে পাটনা, তার পর বেঙ্গালুরু হয়ে ইন্ডিয়ার নেতারা সম্প্রতি মুম্বইয়েও মিলিত হয়ে বিস্তারিত আলোচনা সেরেছেন।সমন্বয় কমিটি তৈরি হয়েছে। আগামী লোকসভা ভোটে ইন্ডিয়া বিজেপিকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে চলেছে বলে মনে করছেন বিরোধী নেতারা। পাল্টা ‘ইন্ডিয়া’ নাম নিয়ে একাধিক বার সরাসরি কটাক্ষ হেনেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং বিজেপির শীর্ষ নেতারাও। এখন প্রশ্ন, ইন্ডিয়া নাম বদলে দেশের নাম শুধুই ভারত করার লক্ষ্যে হাঁটতে শুরু করল মোদি সরকার? 

আগামী ৯, ১০ সেপ্টেম্বর নয়া দিল্লির প্রগতি ময়দানে ভারত মণ্ডপে হবে জি ২০ শীর্ষ সম্মেলন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক-সহ বিশ্বের শীর্ষ নেতারা যোগ দেবেন এই সম্মেলনে । ঠিক তার আগে দেশের নাম বিতর্ক উঠল।

…………………………